মমতাজ পারভীন লিপির কবিতা-ঘৃণা

এবিসি বাংলা ডেস্কএবিসি বাংলা ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  08:33 PM, 25 March 2019

ঘৃণা
-মমতাজ পারভীন লিপি-ঘৃণা
ম থেকে মা
প্রিয় বাক্য মা
মা তুমি কেমন আছো ?
জানি উত্তরে তুমি হাসবে
তুমি কি জানো মা ?
ভালো আছি এই দুটি শব্দে
আমার কতটা শান্তি ভাসে?
মা, তুমি ভালোবাসার ঘর
বেঁচে থাকার একমাত্র আধার
তুমি পূজারীর প্রথম প্রণাম
আধাফোটা শিউলি বকুল;মা
তোমায় জিইয়ে রাখি পরম যত্নে
ভালোবাসায় দিন রাত।

অতি চেনা জানা ছোট পাখি
দেখেছো কেমন করে ?
ছানাদের পরম যত্নে আপন উষ্ণতায় পালকে ঢাকে
যেন কত শত স্নেহের আয়োজন
খাবার গুলো নিজ ঠোঁটে ভেঙ্গে
ছানাদের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে তোলে দেয়
অথচ তুমি!!
তোমার হাতে খাবারের সাধ না মিটিতে
স্নেহ শূণ্য উচ্ছিষ্ট খাবার খেতে পাঠালে
তোমার উষ্ণতায় বেড়ে উঠার আগেই
জ্বলন্ত দাবানলের ভিতর
দ্গ্ধ পোড়া ছাইয়ে ঘর বেঁধে দিলে।

জানো মা !!
আজো হাতে তুলে খেতে পারি না
খাবারের জন্য মায়ার হাত খুঁজি
আজো ঘুমাতে পারিনি
ঘুমানোর জন্য তোমার উষ্ণতা খুঁজি
খেতে আমার ভীষণ কষ্ট হয়
কষ্ট হয় ঘুমাতে, চুল বাঁধতে
তাই এলো চুলেই শুয়ে পড়ি
যদিও আধুনিক সভ্যতায় বিজ্ঞানের কাছে
আমরা সবাই কৃতজ্ঞ;আর
আমি কৃতজ্ঞ নরম তুলতুলে পান্ডা পুতুলের কাছে
চুল বাঁধার কাঁকড়া ক্লিপ; ধন্যবাদ।

মা, বিড়ালের মাতৃত্ব দেখেছো?
বিড়াল বাচ্চার কাঁধ কামড়ে এ বাড়ি ও বাড়ি
আশপাশ সব চিনিয়ে দেয়
কেন ছিনিয়ে দেয় আমি আবিস্কার করেছি
তোমাকে অন্য দিন বলবো
বলবো তেলাপিয়া মাছের গল্প।

মা ! আজ কি করেছি জানো?
মা মাকড়সা
পেটের নীচে থলে ভর্তি ডিম
সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম নিরাপদে
কিন্তু একটি পা ভেঙ্গে ফেলেছি ভুলে
তাই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে
শাস্তির যোগ্যতা অর্জন করেছি মা।

এই তোমার সন্তান!!
যার নিউরণ জুড়ে কষ্টের চাষ
বিরামহীন অবিরাম অবিরত
সূর্যের আলো প্রতিনিয়ত
অবিরাম কষ্টের ভিতর কষ্ট রোপে
পেপার পড়ি না মা কষ্টের খবর
সিনেমা দেখি না মা কান্নার বিবরণে
হুল ফোটানো মশা তাড়িয়ে দিই
বাঁচাতে সামান্যই জীবন

পাখি হাঁস কবুতর আর সমস্ত মাংসে
জন্মান্তরের অনীহা আমার
জন্মান্ধ ভালোবাসায়
মুখের স্বাদ ভূলে যাই স্নেহে
ওদের যুগল প্রেম
ছানা আর বংশের পরিধিতে
যদি জ্বলে উঠে কষ্টের আগুন
যতটা পুরস্কৃত আমি।

জানো মা ?
আমি কখনও বাগানের ফুল তুলি না
সৌন্দর্য হারাবে শেষে
কখনও মাকড়সা’র জাল
বড় কষ্টে গড়ে জীবনের তাগিদ
কখনো পিঁপড়ে পিষে দেইনি পদতলে
ওদেরও ক্ষুধা আমার মতোই
কখনও গাছের সবুজ পাতা
কষ্টের আকার কি আর
অবিকল গাছ আমি কিংবা সঞ্চিতা।

মা জানো !
কখনও ঘড়ি পড়তে চাইনি
সময়ের অহংকারে যদি খর্ব হয় জীবন
ছাতার ছায়ায় হাঁটিনি কখনও
কিংবা পড়িনি উঁচু হিল
চোখে পড়ে অবিরাম
সভ্যতাময় অসহায় জীবন
তবু কখনও একা হাঁটিনি।

মা, ঘৃণা জন্মের পূর্বে
আরো কত শত কথা
তোমার দিনমণি আজও হাতের বালা
অথচ পৃথিবীতে অযোগ্য; বসবাস
ওরা আমাকে হাসতে দেয়নি
দেয়নি প্রাণখুলে কাঁদতে
তুলি হাতে নিতেই
তীঁর ছুড়েছে বুকে
লিখার কলমকে বল্লম ভেবে
ছুড়েছে বিষ বাণ
লিখা ছবি আধারে ঢেকে
লুকিয়ে কেঁদেছি কত
সময় স্বাক্ষী মা গো
কতটা অনাদর করেছি গত।

একদিন কি হলো জানো?
নিদ্রা আর জাগরণর মাঝে
তোমার বেশে সুহৃদ হেসে এলো
অনুভবে অনুমানে যদি বলি
হাতে হাত;চোখে চোখ
দেহটা দেখিনি কখনও
বুক ভর্তি দিয়ে গেলো সাহসী নিঃশ্বাস
দীর্ঘশ্বাস ঝেড়ে ফেলে
বুকের খাঁচায় ঢেলেছে বিশ্বাস
মা সেই আমার ঘুম ভাঙলো
আত্মবিশ্বাসে ভর করে স্বপনের সিঁড়ি
আমি হাঁটতে শিখলাম
স্বপনের সিঁড়ি বেয়ে লিখতে শিখলাম
আমি আঁকতে শিখলাম; ভালোবাসা
আর শেকল ভাঙতে শিখলাম
আমি ভূলের দরজা খুলে দিতেই
অজস্র ঘৃণার মিছিল
ঘৃণায় ঘৃণায় একাকার
তোমাদের প্রসিদ্ধ আগুন।।

(২৪•০৩•২০১৯)

রংপুর বিভাগ

আপনার মতামত লিখুন :