ওরা শামুক বিক্রির টাকায় সংসার চালান

যশোরের সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শায় নিন্ম আয়ের তিন শতাধিক পরিবার জলাশয়ের শামুক কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে তেমন কোন কাজ না থাকায় নিন্ম আয়ের এসব মানুষ বাধ্য হয়ে শামুক কুড়িয়ে তা বিক্রির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থে পরিবারের সদস্যদের মুখে তুলে দিচ্ছেন আহার।
সরেজমিনে জানা যায়, শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের নিন্ম আয়ের কর্মহীন তিন শতাধিক পরিবারের নারী, পুরুষ ও শিশু বিভিন্ন নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় ও পুকুর জলাশয়ে সারাদিন শামুক কুড়ান। সারাদিনের কুড়ানো শামুক বিকালে নির্ধারিত বিভিন্ন স্থানে এনে জড়ো করেন। তারপর শামুকের ব্যবসায়ী (ক্রেতা) নিকট বিক্রি করেন। প্রতিকেজি শামুক ৫ টাকা দরে বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়েই কোন রকম সংসার চলছে।
শামুক সংগ্রহের কাজ চলে বছরের বাংলা মাস আষাঢ় থেকে কার্তিক পর্যন্ত। শামুক সংগ্রহকারী অনেকেই জানান, এবছর জলাশায়ের পানি অত্যন্ত বিষাক্ত। যার ফলে পানিতে নামলেই শরীর চুলকাচ্ছে। তারপরও জীবিকার তাগিদে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন এই কাজ করতে।
কথা হয় ডিহি ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রামের জেলে পাড়ার উষা, সাংরানী মন্ডল, পাকশিয়ার রজব আলী, শালকোনার মংলা ও উকিলের সাথে। তারা বলেন, জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ২/৩ টা পর্যন্ত বিভিন্ন জলাশয় থেকে শামুক সংগ্রহ করি। প্রতিদিন ৭০/৮০ কেজি শামুক সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। এতে যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।
শার্শা ইউনিয়নের স্বরুদাহ ওয়াবদাহ খাল পাড়ার জগায়, কৌশলা ও রেনু বলেন, এখন মাঠে তেমন কোন কাজকর্ম নেই। তাই প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন জলাশয়ে ঘুরে ঘুরে ৫০/৬০ কেজি শামুক সংগ্রহ করতে পারছি। ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে যা উপার্জন হয় তা দিয়েই পরিবারের সদস্যদের মুখে আহার তুলে দিচ্ছি। নিজামপুর ইউনিয়নের গোড়পাড়া জেলে পল্লীর বুদো, মিলন রানী, ইছামতি ও মিনু বলেন, আমরা গরীব মানুষ, দিন এনে দিন খাই। সংসার চালানোর জন্য শামুক কুড়াচ্ছি। তবে এবছর পানিতে নামলেই গাঁ চুলকাচ্ছে। কিন্তু পেটের ক্ষুধা তো কোন বাঁধ মানে না। তাই বাধ্য হয়ে এই কাজ করছি। বাহাদুরপুর শাখারীপোতার ওয়াজিদ, ভানিরানী, পুটখালী শিকড়ি বারোপোতার আলী হোসেন, রোজিনা, রুবি, গোগা মহিষাকুড়ার আলম, মিতা ও সুভাষ বলেন, তেমন কোন কাজ না থাকায় শামুক কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি।
কথা হয় শামুক ব্যবসায়ী শার্শার স্বরুপদহ ওয়াপদা খালপাড়ার আকরাম হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, শার্শার ১১টি ইউনিয়নের তিন শতাধিক নি¤œ আয়ের পরিবারের নিকট থেকে প্রতিদিন ১৭০/১৭৫ মন শামুক ক্রয় করি। এই শামুক খুলনা ডুমুরিয়ার চেঁচুড়িয়া কপালিয়া ব্রিজ বাজার শামুকের আড়তে বিক্রি করি। তিনি বলেন, শামুক মেশিনে প্রক্রিয়াযাত করণ করে ঘেরে বাগদা ও গলদা চিংড়ি মাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ