স্টেশনে বিরুতি খুলে দেয় পুলিশের কপাল!

এবিসি বাংলা ডেস্কএবিসি বাংলা ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  07:18 PM, 23 March 2019

এবিসি ডেস্ক: দৌলতদিয়া ঘাট স্টেশন থেকে রাজশাহীগামী ট্রেন ‘মধুমতি এক্সপ্রেস’ ছেড়ে যাওয়ার সময় বিকাল ৩টা। রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি প্রতিদিন এ স্টেশনে ভেড়ে দুপুর ২টার আগে। স্টেশনে বিরতির সময়টুকু যেন সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের কপাল খুলে দেয়!

স্টেশনের যে পথ দিয়ে যাত্রীরা আসেন, ঠিক সে পথের মুখেই পুলিশ সদস্যরা দাঁড়িয়ে থাকেন। যাত্রী মনে হলেই পথ আগলে দাঁড়ায় পুলিশ। তাদের বাধার কারণে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে আর যাওয়ার উপায় থাকে না যাত্রীদের। দর কষাকষা শুরু হয় সেখানে দাঁড়িয়েই। টিকিটের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে সামান্য কম টাকায় আসনের ব্যবস্থা করে দেন পুলিশ সদস্যরা। তবে আসন মিললেও কোনো টিকিট মেলে না।

শুক্রবারও (২২ মার্চ) এমন চিত্রের ব্যত্যয় ঘটেনি। একপ্রকার জোর করেই যাত্রীদের টিকিট কাটা থেকে বিরত রাখছিলেন পুলিশ সদস্যরা। কখনও হাত ধরে, কখনও ব্যাগ ধরে টেনে-হিঁচড়ে যাত্রীদের আসনে বসিয়ে দিচ্ছিলেন নজরুল ও সেলিম নামের দুই পুলিশ সদস্য।

দৌলতদিয়া স্টেশন থেকে পেছনের ৫৩ আসনের বগিটি পূর্ণ হয়ে যায় পুলিশের বসিয়ে দেয়া যাত্রীতে। ট্রেনটি ছেড়ে দেয়ার খানিক পরই পুলিশের একটি টিম টাকা তুলতে আসেন, যার নেতৃত্বে ছিলেন পুলিশ সদস্য আসফাকাতুর। সঙ্গে অপর দুই পুলিশ সদস্য নজরুল ও সেলিম। ১০ মিনিটের মধ্যেই সব যাত্রীর কাছ থেকে টাকা তুলে নেন আসফাকাতুর।

এ সময় একটি আসনে এক হকারকে বসা দেখে ক্ষিপ্ত হন আসফাকাতুর। ওই হকার দৌলতদিয়া থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত যেতে ২০ টাকা দিতে চাইলে আসফাকাতুর রাগান্বিত হয়ে বলেন, ‘২০ টাকা ক্যারে, গুলি কর বেটারে।’

পরে পুলিশ সদস্য নজরুল ও সেলিম ওই হকারকে তুলে দিয়ে অন্য আরেকজনকে বসিয়ে ৭০ টাকা আদায় করেন।

কথা হচ্ছিল যাত্রী সৈকতের সঙ্গে। বলেন, ‘লালন মেলায় যাব বলে ঢাকা থেকে এসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। পুলিশের আচরণ দেখে অবাক হয়েছি। আমাকে টিকিট কাটতে যেতেই দিল না পুলিশ সদস্য নজরুল। বলল, ‘পেছনের বগি পুলিশের। এখানে টিকিট লাগে না। আসন দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। টিকিটের চেয়ে ১০-১৫ টাকা কম দিয়ে বসিয়েন। ঝামেলা হলে আমরা তো আছি। এ কারণে ইচ্ছা থাকলেও আর টিকিট কাটতে পারলাম না। আসনও পেলাম। দৌলতদিয়া থেকে কুষ্টিয়ার ভাড়া ৮৫ টাকা। আমরা দুই আসনের জন্য দিলাম জনপ্রতি ৭০ টাকা করে মোট ১৪০ টাকা।’

পুলিশ কেন টাকা তুলছে- জানতে চাইলে পুলিশ সদস্য নজরুল বলেন, এ বগিতে পুলিশ সদস্যরা বসেন। আমাদের বসার আসনগুলোতে যাত্রীদের বসতে দিয়েছি। আমরা তো টিকিটের চেয়ে কম টাকা নিচ্ছি।

আপনারা আছেন (পুলিশ সদস্য) তিনজন, টাকা তুলছেন ৫৩ আসনের যাত্রীর কাছ থেকে- এমন প্রশ্ন করা হলে কোনো জবাব না দিয়ে দ্রুত চলে যান নজরুল।

একই প্রশ্ন করা হয় পুলিশ সদস্য আসফাকাতুরকে। উল্টা প্রশ্ন, ‘পুলিশ কেন টাকা তুলছে, তার কৈফিয়ত কি আপনাকে দিতে হবে?’

ট্রেনটি রাজবাড়ী স্টেশনে আসলে বেশ কয়েকজন টিকিটধারী যাত্রী ওঠেন। আসন নিয়ে এবার শুরু হয় বিবাদ। তখন পুলিশ সদস্যরা অবশ্য টিকিটহীন যাত্রীদের অন্য বগিতে বসিয়ে টিকিটধারী যাত্রীদের বসানোর ব্যবস্থা করে দেন।

দৌলতদিয়া থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত যেতে পেছনের এ বগিতে রেলের কোনো টিটি বা চেকারের দেখা মেলেনি।

সূত্র:জাগোনিউজ

খুলনা বিভাগ

আপনার মতামত লিখুন :