স্কুলছাত্রীর বিয়ে,কনের ওজনে যৌতুক নিলো বরের বাবা (ভিডিও)

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিয়ের ভিডিও ভাইরাল

সুনীল ঘোষসুনীল ঘোষ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  03:11 AM, 29 April 2023

কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুরে বাল্যবিয়ে নিয়ে একই সাথে দুটো অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। একে তো বাল্যবিয়ে দণ্ডনীয় অপরাধ। তারপর কনে অস্টম শ্রেণির ছাত্রীর ওজনে ৫ টাকার কয়েন দেয়া হয়েছে যৌতুক হিসেবে।

কনের পরিবারের দাবি, জন্মের পর মানত ছিল মেয়ের ওজনের সমপরিমাণ টাকা দিয়ে বিয়ে করাবেন।
তবে এসবই আইনের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা-দাবি স্থানীয় প্রতিবেশি নিকমাল হোসেন, রহিমন নেছা ও মেয়ে পরিবারের জনৈক ব্যক্তির।

বরপক্ষের দাবি পূরণে মেয়ের বাবা বস্তাভর্তি টাকা দিয়েছেন। এনিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে ২৫ এপ্রিল দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের প্রাগপুর মাঠপাড়া গ্রামে ঘটে।

 

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ওবায়দুল্লাহ বলেন, এখনো অভিযোগ পাইনি। খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে নেয়া হবে আইনী ব্যবস্থা।

 

স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন-বাল্যবিয়ের খবর পেলে প্রশাসন এসে হাজির হয়ে যায়। তারজন্য অভিযোগ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া বিষয়টির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে

 

 

তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী প্রাগপুর মাঠপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কনের বাবা রতন আলীর বাড়িতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মেয়েকে দাঁড়িপাল্লায় তুলে তার সমপরিমাণ ৫ টাকার কয়েন দেয়া হয়েছে। এতে মেয়ের বাবা রতন আলীকে প্রায় ৪০ হাজার টাকার পরিমাণে মেয়ের যৌতুক হিসেবে দিতে হয়েছে।

 

মেয়ের বাবা রতন আলীর দাবি, মেয়ের জন্মের সময় মানত করা হয়েছিল বিয়ের সময় ওজনে বরকে মুদ্রা দেবো। তাই মেয়েকে দাঁড়িপাল্লায় মেপে কয়েন দেয়া হয়েছে। এটি যৌতুকের টাকা না দাবি করে তিনি বলেন-উপহার বাবদ দেয়া টাকা ওরা সাংসারিক জীবনের কাজে লাগাতে পারে অথবা খানাপিনা করতে পারে। সবই বরপক্ষের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করবে।

 

সমালোচনা যখন সর্বমহলে ঝড় তুলেছে এবং প্রশাসন নিশ্চুপ রয়েছে তখন খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল ভিন্ন তথ্য। জানা যায় মেয়ে মাস দুয়েক একই এলাকার মাইনুলের ছেলে কৃষক বিপ্লবের প্রেমে পড়ে।

মেয়ের ইচ্ছে পূরণে তার বাবা ধর্ণা দেন মইনুলের বাড়িতে। তিনি সবকিছু খুলে বলেন। এতে যৌতুক দাবির সুুযোগ পেয়ে যায় মাইনুল। তিনি সাফ জানিয়ে দেন প্রেমের বিয়ে মানা যায় না, তবে কনের ওজনে টাকা দিলে রাজি আছি। মেয়ের বাব সেই শর্ত মেনে বিয়ে সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেন এবং ২৫ এপ্রিল হৈ চৈ করে রাজসিক কায়দায় বিয়ে দেন।

 

প্রাগপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান জানান, গত দুই মাস আগে মাঠপাড়ার বাসিন্দা রতন আলীর অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত মেয়ে প্রেম করে একই এলাকার মাইনুলের ছেলে  ২৪ বছরের যুবক বিপ্লবের হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ী দেয়। এতে বরের বাবা ক্ষুব্ধ হয়ে বলে ওই মেয়ের আমার বাড়িতে জায়গা নেই। তবে মানতে পারি যদি মেয়ের ওজনে টাকা দেন মেয়েপক্ষ।

তবে শেষ পর্যন্ত চোরের ওপর বাটপাড়ীর হয়েছে।

মেয়ের বাবা চালাকি করে কাগজের নোটের পরিবর্তে মেয়ের ওজনের সমপরিমাণ ৫ টাকার কয়েন দিয়েছেন। এতে ৪০ হাজারের কিছু বেশি টাকা দাঁড়িপাল্লায় মেপে শর্ত পূরণ করেছেন।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সঙ্গে কথার বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, আমার এলাকার কাজী দ্বারা বিয়ে হয়নি, সে কারণে এই অল্প বয়সী মেয়ের বিয়ে আদৌ রেজিস্ট্রার্ড হয়েছে কি না সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি। তাছাড়া কনের বাবা রতন আলী এটিকে মানত দাবি করলেও এটি মূলত যৌতুক হিসেবে বরপক্ষকে দেয়া হয়েছে।

একই এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, এভাবে প্রকাশ্যে ওজন করে টাকা দেয়া ঠিক হয়নি। যেখানে বাল্যবিয়ে দন্ডনীয় অপরাধ সেখানে যৌতুক প্রদান আরও বড় অপরাধ। একই সাথে দুটো অপরাধ করেছে কনে ও বরপক্ষ। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এলাকায় একই ঘটনা ঘটতে থাকবে।

 

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বরের বাবা ও পরিবারের লোকজন মুখ খুলতে রাজি হননি।

প্রাগপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রাগপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক আশরাফুজ্জামান মুকুল বলেন, মেয়েটি আমার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। কীভাবে বিয়েটি হলো তা জানতে খোঁজ নিচ্ছি।

 

আপনার মতামত লিখুন :