সুপ্রভাতের ১৬৩ বাসের মধ্যে ১৪৫টির কাগজপত্র নেই

>>> যাদের দেখার দায়িত্ব ছিল কিন্তু ঘুষ খেয়ে চুপ ছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে
ঢাকা অফিস: যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবী ছাত্র আবরার চৌধুরীকে চাপা দেয়ার পর সড়কে চলাচল বন্ধ হওয়া সুপ্রভাত পরিবহনের ১৬৩টি বাসের মধ্যে ১৪৫টিরই কাগজপত্র ঠিক নেই। পড়ুন>>>ছাত্র আবরার আহাম্মেদের ঘাতক বাসচালক ৭দিনের রিমান্ডে
সচেতন মহল প্রশ্ন ছুড়েছেন, এগুলো দেখার দায়িত্ব ছিল কার ? যারা সেই দায়িত্ব পালন করেনি, তাদের কি বিচারের আওতায় আনা জরুরি নয় ?
এই বাসগুলোর ফিটনেস, চলাচলের বৈধতাসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র মেয়াদোত্তীর্ণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।
গত ২১ মার্চ সুপ্রভাত ও জাবালে নূর পরিবহনের সব বাসের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে বিআরটিএর পরিচালক সিরাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিআরটিএ।
সুপ্রভাত পরিবহনের ১৬৩টি এবং জাবালে নূর পরিবহনের ২৯টি বাসের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় এই কমিটি।
বিআরটিএর পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবেদন আমরা আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে জমা দিয়েছি।
“তিনি মনে হয় তা মেয়র মহোদয়ের কাছে দিয়েছেন।…এখন এটা নিয়ে হয়তো একটা সিদ্ধান্ত হবে।”
বিআরটিএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুপ্রভাত পরিবহনের ২৯টি বাস চলাচল করছিল মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেস সনদ নিয়ে। ১৪টি বাসের ট্যাক্স টোকেন ও দুটি বাসের চলাচলের বৈধতা ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ।
এছাড়া সুপ্রভাতের ১০৪টি বাসের লাইসেন্সের শ্রেণি সঠিক পাওয়া যায়নি; আর ৩২টির লাইসেন্স বিআরটিএতে দাখিল করা হয়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তবে এই পরিবহনের ১৮টি বাসের ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, রুট পারমিট সনদ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সঠিক পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। এছাড়া এসব বাসের চালকদের ২৭টির শ্রেণি সঠিক ছিল।
গত ২৯ জুলাই কুর্মিটোলায় কালশী ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত জাবালে নূর পরিবহনের ২৯টি বাসের মধ্যে ৭টির কাগজপত্র বিআরটিএর কমিটির কাছে জমা দেয় মালিকপক্ষ। বাকি ২২টি বাসের কাগজপত্র বিআরটিএর সার্ভার থেকে যাচাই করে কমিটি।
তাতে দেখা যায়, একটি বাসের রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস মেয়াদোত্তীর্ণ; পাঁচটি বাসের রুট পারমিট ও ট্যাক্সটোকেন মেয়াদোত্তীর্ণ; একটি বাসের ট্যাক্স টোকেন ও রুট পারমিট মেয়াদোত্তীর্ণ; চারটি বাসের রুট পারমিট মেয়াদোত্তীর্ণ।
জাবালে নূর পরিবহনের ১০টি বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন এবং রুট পারমিট সনদ সঠিক পাওয়া যায়।
এই পরিবহনের অন্য রুটের বাসের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বিআরটিএর কমিটি।
পাশাপাশি দুই পরিবহনের মালিকদের কাছে ‘আরও কিছু কাগজপত্র’ চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।
গত ১৯ মার্চ রাজধানীর নদ্দা এলাকায় সুপ্রভাত বাসের চাপায় ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী আবরার নিহত হওয়ার পর সেই বাসের রেজিস্ট্রেশন, রুট পারমিট সাময়িক ভাবে বাতিল করা হয়।
সে সময় ওই বাসের চালক মো. সিরাজুল ইসলামের ড্রাইভিং লাইসেন্সও বাতিল করে বিআরটিএ।
পরের দিন সুপ্রভাত এবং জাবালে নূর পরিবহনের সব বাসের চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বিআরটিএ জানায়, আবরারকে চাপা দেওয়া ঢাকা মেট্রো ব-১১-৪১৩৫ নম্বরের বাসটি ঢাকার মহাখালী থেকে টঙ্গী, কালিগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত চলাচল করার কথা।
কিন্তু সেই রুটে চলাচল না করে বাসটি সদরঘাট থেকে টঙ্গী রুটে চালানো হচ্ছিল বলে জানিয়েছে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।
সচেতন মহল বলছেন, এতগুলো গাড়ি কাগজপত্র ছাড়াই এতদিন সড়কে কিভাবে চলাচল করলো এবং তা দেখার দায়িত্বই বা কার ছিল ?
যাদের দায়িত্ব ছিল দেখার তারা দেখেনি। তাদের কি বিচারের আওতায় আনা জরুরি নয় ?
বাংলাদেশ