সরষের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

এবিসি বাংলা ডেস্কএবিসি বাংলা ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  06:08 PM, 02 January 2023
ফাইল ছবি

যশোরে মাঠের পর মাঠ হলুদ ফুলে দুলছে গাছ। মৌমাছি তার গুনগুন শব্দে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত। সবুজ ক্ষেতে হলুদ ফুলের সমারোহ যেন পথচারীর নজর কাড়ছে। শীতের সকালে সোনাঝরা রোদ গায়ে মেখে ক্ষেত ঘুরছেন কৃষক। একগুচ্ছ ফুল ছেড়ার আশায় দিনভর সুযোগ খুঁজে-ফেরেন পাড়ার বউ-মেয়েরা। অপরূপ এই সৌন্দর্যে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে প্রকৃতি।

 

 

 

কৃষিবিভাগ বলছে কোনো রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঁছড়ে না পড়লে এবার সরষের বাম্পার ফলন হবে। এরফলে লক্ষ্যমাত্রা যেমন ছাড়িয়ে যাবে, তেমনি লাভবান হবে কৃষক। কিছুটা হলেও ভোজ্য তেল সংকট কাটিয়ে উঠতে ভূমিকা রাখবে নানা প্রজাতির সরিষা।

 

যশোর-মাগুরা সড়কে খাজুরা এলাকায় দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ হলুদ ছড়াচ্ছে সরষে ফুল। একই চিত্র দেখা গেছে যশোর সদরের হৈবতপুর ও চুড়ামনকাঠি ইউনিয়নে। কেশবপুর সাগরদাঁড়ি সড়কের দু’পাশে ক্ষেতের পর ক্ষেত, যদ্দুর চোখ যায় শুধুই দেখা গেছে সরষে ফুল। এই অভিন্ন চিত্র যশোরের সর্বত্রে।

 

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম জানান, চলতি বছর জেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২৪ হাজার ৩০২ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর যশোরে ১২ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও চাষ হয়েছিল ১৫ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে যশোর সদরে ৩ হাজার ৫৫৭, শার্শা উপজেলায় ৫ হাজার ৮২০, ঝিকরগাছায় ৩ হাজার ৩৫, চৌগাছায় ২ হাজার ৭৫০, বাঘারপাড়ায় ৩ হাজার ৮২০, অভয়নগরে ১ হাজার দুইশ’ মণিরামপুরে ২ হাজার ৫৫০ ও কেশবপুর উপজেলায় ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করেছেন কৃষক।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, চলতি বছর টরি-৭, বারি সরিষা-১৪, ১৭ ও ১৮ প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল সরিষার চাষ হয়েছে। আমন ধান কাটার কিছুদিন আগে ক্ষেতে বীজ ছড়িয়ে ছিলেন কৃষক। কেউ আবার আউস ধানক্ষেতে বুনেছেন সরিষা। এরমধ্যে অধিকাংশ ক্ষেতে বীজ এসেছে। কিছু ক্ষেতে ফুল ফুটে আলো করে রেখেছে মাঠ। তিনি বলেন, দেশে ভোজ্য তেল সংকট দেখা দেয়ায় সরকারের নির্দেশনা ছিল বেশি বেশি তেল জাতীয় ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করা। সেই নির্দেশনা মেনে কৃষকদের সরষে চাষে পরামর্শ দেয়া থেকে শুরু করে সব রকমের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে। যেকারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বি-গুণ জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবছর সরষের বাম্পার ফলন হবে।

যশোরের মথুরাপুর গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন জানান, আমন ধান কাটার সপ্তাহখানেক আগে নরম মাটিতে সরষের বীজ ছড়িয়ে ছিলাম। ধান কাটার পর সরষের চারা গজিয়ে এখন পূর্ণাঙ্গ গাছ হয়ে ফুল ফুটেছে। আশা করছি-আমনের লোকসান সরষে বিক্রি করে পুষিয়ে নিতে পারবো। তাছাড়া বছরে যে সরষে তেল লাগে, তা নিজেই বানিয়ে রাখবো। তিনি বলেন, এখন বাজারে খাঁটি সরষের তেল পাওয়া যায় না। সব কেমিক্যাল মেশানো। সেকারণে সরষের চাষ করেছি-বলেন মকবুল হোসেন।

অনুরুপ মন্তব্য করেন যশোর শহরতলী সুলতানপুর গ্রামের বিনয় দাশ। তিনি বলেন, সরষে ফুলের বড়া খুবই সুস্বাদু। যেকারণে অনেকে ফুল ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। যেকারণে সরষে ক্ষেত নজরে রাখতে হচ্ছে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে। ভাল দামও পাবেন কৃষক-মন্তব্য কৃষি বিভাগের এই উর্দ্ধতন কর্মকর্তার।

 

আপনার মতামত লিখুন :