শীতের প্রকোপে বিপাকে ছিন্নমূল মানুষ
যশোর জেলা প্রশাসনের কম্বল বিতরণ শুরু

শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে যশোরে। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে দক্ষিণাঞ্চল। দৃষ্টি সীমা ১০ মিটারের নিচেই নেমে এসেছে। মঙ্গলবার রাত থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত যশোরে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরআগে ৩০ ডিসেম্বর যশোরে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু তখন শৈত্যপ্রবাহ কম থাকায় শীতের তীব্রতা এতোটা বেশি অনুভুত হয়নি।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোরে বাতাসের আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয় ৭৬ শতাংশ। তবে চুয়াডাঙ্গায় বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ শতাংশে। আর্দ্রতা বৃদ্ধি ও শৈতপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় শীত বেশি অনুভুত হচ্ছে। মঙ্গলবার ঘনকুয়াশার কারণে যশোরাঞ্চলে দেখা মেলেনি সূর্যের মুখ। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রেকর্ড সংখ্যক শিশু ও বৃদ্ধ ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে হেডলাইট জ¦ালিয়ে ও কমগতিতে গাড়ি চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার গভীর রাতে শহরের স্টেশন, আদালত চত্বর, শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা ও চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন ছিন্নমূল মানুষকে জবুথবু অবস্থায় রাত কাটাতে দেখা যায়। মঙ্গলবার সকালে দড়াটানা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকজনকে ছিড়া-ময়লা বস্ত্রে বসে থাকতে দেখা যায়।
যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান-শীতার্ত মানুষের জন্য কাজ করছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে জেলার প্রত্যেকটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কম্বল পাঠানো হয়েছে। রাতে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।
যশোর বিমান বাহিনী নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অফিস জানায়, মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত জেলায় সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা ১১টার পর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা ৬টায় সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৭৬ শতাংশ। শৈত প্রবাহ অব্যাহত থাকায় শীত বেশি অনুভুত হচ্ছে জানিয়ে আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়-রাত যত গভীর হবে; তাপমাত্রা কমে শীতের তীব্রতা ততই বাড়তে থাকবে। আগামী শুক্রবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকবে বলে জানানো হয় সূত্রে।
একই সময়ে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গা জেলায়। সেখানে তাপমাত্রা নেমেছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ হিসেবে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিল যশোরে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার অফিসের ইনচার্জ রকিবুল হাসান জানান-দক্ষিণাঞ্চলের সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল সবচেয়ে বেশি ৯৯ শতাংশ। তাছাড়া হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ঘনকুয়াশার কারণে দৃর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনে হেডলাইট জ্বালিয়ে ও কমগতিতে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন।
যশোর ও চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বৃহত্তর যশোরই; গোটা দক্ষিণাঞ্চল কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। দু’একটি স্থানে এক ঝলক সূর্যের মুখ গেছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রমতে, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে। এরবাইরে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগী ভর্তির খবর পাওয়া গেছে।
যশোর রেলস্টেশনে সুইপার কলোনী ও স্টেশনের আশপাশে আগুন জ্বালিয়ে ছিন্নমূল মানুষের তাপ নিতে দেখা যায় মঙ্গলবার বেলা ৯টার দিকে। বয়োবৃদ্ধ নারী রহিমন নেছা জানান-তার শীতবস্ত্র নেই। স্টেশনে পড়ে থাকি। এখনো কেউ গরমবস্ত্র দেয়নি।
যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন-ইতিমধ্যে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে শীতবস্ত্র পাঠানো হয়েছে। দ্রুত বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাতে শহরে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।
খুলনা বিভাগ