মণিরামপুরে গভীর রাতে পুলিশের সামনে সংখ্যালঘুর বাড়িতে তান্ডব

মণিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা: ‘ওরা পুলিশের সামনে আমার সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। গভীর রাতে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঘুমন্ত সন্তানদের টেনে-হেঁচড়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। বাঁধা দিতে গেলে আমাকে মারিপট করে ওরা। এমন হামলার আশংকায় থানায় জিডি করেও কোন লাভ হয়নি।
বাকরুদ্ধ কন্ঠে এসব বলছিলেন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার খাকুন্দি গ্রামের সংখ্যালঘু পরিবারের নিখোঁজ সচিন মাস্টারের (অব:) প্রতিবন্ধী মেয়ে বণানী মন্ডল। এসময় অঝোরে কাদছিলেন আর বলছিলেন, মাস্টার হাফিজুর রহমান, স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল, মাহবুর রহমানের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন সন্ত্রাসী ঘরের দরজা ভেঙ্গে আসবাবপত্র ভাংচুর, ঘরে রক্ষিত ধর্মীয় দেব-দেবীর ছবি ছিড়ে ফেলাসহ ভাত-তরকারির গামলা মাটিতে ছুঁেড় ফেলে দেয়। শুধু এখানেই খ্যান্ত হয়নি, বাড়ির উঠানে থাকা তুলসি গাছ কেটে ফেলে বিচালি ঘরে আগুন দেয়। উপস্থিত পুলিশের কাছে বিচার চাইলে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে সন্ত্রাসীরা।’
এ ঘটনায় থানা পুলিশ মামলা না নেয়ায় গত ৪ মার্চ সোমবার যশোর আদালতে হাফিজুর রহমান, কামাল গাজী, মাহাবুর, জয়দেব মন্ডল, কালাম মোড়লসহ অজ্ঞাতনামা ২৫/৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি। বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনবেস্টিগেশন) কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার রাত ১২টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার খাকুন্দি গ্রামে এই ঘটনা ঘটলেও থানা পুলিশের ভয়ে টু-শব্দটি করতে পারেনি ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর পরিবার। মণিরামপুর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে প্রেসক্লাবের গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এসে ভংকর ওই রাতের বর্ণনা করেন তিনি।
পরে গণমাধ্যম কর্মীরা সরেজমিন ঘটনাস্থলে গেলে সত্যতা পাওয়া যায়।
হাফিজুর রহমান জানান, তিনি ওসি সহিদুল ইসলাম, এসআই রবিউল ইসলামসহ থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে নিজের বাড়ি দখলে নিতে রাতের ওই সময়টা বেছে নিয়েছিলাম। প্রায় দেড় বছর আগে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে দ্বিতল বসতঘরসহ ৬২ শতক জমি বণানীর বাবা সচিন মাস্টারের কাছ থেকে তিনি কিনেছিলেন। এসব করতে তার অনেক টাকা খরচ হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে বণানী মন্ডলের দাবি, তার স্কুল মাস্টার বাবা অবসরে যাবার পর ব্রেন ষ্ট্রোক হয়। তিনি প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার বাবা এলাকায় বিয়ে দিয়ে স্বামীসহ তাকে ওই বাড়িতে রেখে দেয়। কিভাবে জমি কিনেছেন হাফিজুর তা তিনি জানেন না। সেই থেকে তার বাবা নিখোঁজ হওয়ায় হাফিজুর গংদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়। হামলার আশংকায় থানায় জিডি করা হলেও তাতে কর্ণপাত করেনি পুলিশ।
জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মশিয়ূর রহমান বলেন, এভাবে রাতে বাড়ি দখল নেয়াটা হাফিজুর অন্যায় হয়েছে।
জানতে চাইলে থানার এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, টহলে থাকায় স্যারের নির্দেশে ওই এলাকায় থাকলেও ঘটনাস্থলে যায়নি।
ওসি সহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার রাতে ওই বাড়িতে তিনি যাননি।
খুলনা বিভাগ