বাংলাদেশ পুলিশেও পিছিয়ে নেই নারী

এবিসি বাংলা ডেস্কএবিসি বাংলা ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  02:56 AM, 09 March 2019

এবিসি ডেস্ক: স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে প্রথম আট নারী কনস্টেবল নিয়োগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে তারা কাজ করতেন সাদা পোশাকে। এরপর পুলিশি পোশাকে নারী সদস্যদের নিয়োগ শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। সে সময় মাত্র ১১ নারী সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে যে পথচলা শুরু সে সংখ্যাটা আজ ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে।

চ্যালেঞ্জিং পেশা পুলিশে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে নারীরা। মিলেছে স্বীকৃতিও। অপরাধ দমন ও নিরাপত্তায় তারা সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। পিছিয়ে নেই জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনেও।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি ২০১৯ এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত মোট নারীর সংখ্যা ১৩ হাজার ১৭৭ জন। যা পুলিশের মোট জনবলের শতকার ৬.৯৬৫ শতাংশ। কর্মরত নারী ও পুরুষের সংখ্যার অনুপাত প্রায় ১:১৩।

পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে অর্থাৎ বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত প্রথম শ্রেণির নারী কর্মকর্তা রয়েছেন ২৭৪ জন। এদের মধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি একজন, অতিরিক্ত ডিআইজি চারজন, পুলিশ সুপার ৭২, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১০১ এবং সহকারী পুলিশ সুপার রয়েছেন ৯৬ জন।

পড়ুন : প্রশাসনের উচ্চপদে ৫৩৫ নারী

জানা যায়, ১৯৮৬ সালে প্রথম সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে ফাতেমা বেগমের যোগদানের মাধ্যমে পুলিশে উচ্চ পর্যায়ে (বিসিএস) নারীদের নিয়োগ শুরু হয়। বর্তমানে পুলিশে উচ্চ পর্যায়ে (বিসিএস) কর্মরত নারীর সংখ্যা মোট বিসিএস কর্মকর্তার দশ শতাংশের বেশি। এতে নারী ও পুরুষের সংখ্যার অনুপাত ১:১০।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএসে আটজন নারী সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে নারীদের প্রবেশাধিকার আরও উন্মুক্ত হয়। সংখ্যার সঙ্গে বাড়তে থাকে নারী পুলিশের সুনাম আর সাফল্য।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এএসপি সুদীপ্ত সরকার জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে নারী পুলিশের কাজের ক্ষেত্র যেমন প্রসারিত হয়েছে, তেমনি কর্মক্ষেত্রে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে চলা নারী পুলিশের সফলতা এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরেও।

তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন নারী পুলিশ মানেই ছিল শুধু দাফতরিক দায়িত্ব পালন। কিন্তু এখন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন নারী সদস্যরা। নিরাপত্তার পাশাপাশি টেকসই পুলিশি ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্থানীয় তদন্তকারীদের উৎসাহিত করতে সহায়তা, অপরাধ ও মানুষের ঝুঁকি প্রশমনের পাশাপাশি শত্রুর মোকাবেলায়ও নারী সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে নারী সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও আগে ট্রাফিক সার্জেন্ট পদে দেখা যায়নি। ২০১৭ সালে ২৮ নারী সার্জেন্ট পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে রাজপথে কাজ শুরু করেন নারী পুলিশ সদস্যরা।

বর্তমানে শুধু ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগে কাজ করছেন ১৭৬ নারী সদস্য। এছাড়া সিএমপিতে ২০, আরএমপিতে ছয়, এসএমপিতে ৯, কেএমপিতে আট, বিএমপিতে দুই, আরএমপি ও জিএমপিতে একজন করে নিয়োজিত রয়েছেন।

নারী পুলিশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, নেতৃত্ব ও দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০০৮ সালে চালু করা হয়েছে ‘উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্ক।’ ২০১২ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে নারী পুলিশের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। ওই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নারী পুলিশের ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে।

১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে প্রায় আট হাজার পুলিশ অংশ নিয়েছেন। চলতি বছরের সর্বশেষ তথ্যমতে ১২৭ নারী পুলিশ সদস্য জাতিসংঘ মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্তমানে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন রউশন আরা বেগম। অন্যদিকে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিআইজি) আমেনা বেগম এবং র‌্যাব-৮ এর সিও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম।

পুলিশে নারীর অগ্রগতি সম্পর্কে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিআইজি) আমেনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুলিশ নারীবান্ধব নয় এটা বলবো না। নারীবান্ধব বিষয়টি অন্যরকম। তবে নারীর প্রতি পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। যেটা পুলিশে আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিবর্তন এসেছে। আর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব নেবার পর থেকে পুলিশে নারীর সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে সম্মান, মর্যাদা ও মেধার প্রতিফলন।

আগামীতে পুলিশে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ নারী বাড়ানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ছয় মাস পর পর পুলিশের সব ক্ষেত্রে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিসহ যে জায়গাগুলোতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, সেখানে জেন্ডার ব্যালান্স, জেন্ডার অ্যাওয়ারনেস বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুলিশে নারীর অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোই শুধু না, পুরুষ সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে সহযোগী করে তোলা হচ্ছে।

র‌্যাব-৮ অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মাঠ পর্যায়ে পুলিশের নারী সদস্য বাড়ানো গেলে কার্যকারিতা আরও বাড়বে। মানুষ পুলিশি সেবা আরও বেশি পাবে। এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে পুরুষের চেয়ে নারী সদস্যরা বেশি হ্যান্ডেল করতে পারবে। সিটিজেনরা এ ক্ষেত্রে উপকৃত হবে। আর দৃষ্টিভঙ্গির বিষয় তো আছেই। তবে সবখানে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সামনে আরও হবে।

বাংলাদেশ

আপনার মতামত লিখুন :