বহু কাঠখড় পুড়িয়েও পার পাচ্ছেন না যশোরে ভৈরবপাড়ের দখলবাজরা

এবিসি বাংলা ডেস্কএবিসি বাংলা ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  10:40 PM, 27 March 2019

এবিসি নিউজ: বহু কাঠখড় পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত পার পেলো না যশোরের ভৈরব পাড়ের শহর অংশের অবৈধ স্থাপনার মালিকরা। আজ ২৭ মার্চ বিকালে শতাধিক স্থাপনার বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে প্রশাসন। রাত পোহালেই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। প্রশাসনের চূড়ান্ত এই তৎপরতা শুরু হওয়ার পর আজ সকালে যশোর পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতি ও গরীব শাহ ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব স্থাপনা বৈধ দাবি করেন। একই সাথে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ না করার দাবিতে তারা প্রেসক্লাব যশোরের সামনে ও শহরের দড়াটানা মানববন্ধন করেন। তবে গুটি কয়েক দখলদার ছাড়া উচ্ছেদের পক্ষে শহরের সব শ্রেণি পেশার মানুষ।

আজ সন্ধ্যার দিকে প্রভাবশালী নামে খ্যাত হাসান বুক ডিপো কর্তৃপক্ষকে ঘর খালি করতে দেখা গেছে। এরআগে অনেক অবৈধ স্থাপনার মালিকদেরও মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন।

জানা যায়, যশোর জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে দড়াটানা ভৈরব চত্ত্বর থেকে শুরু করে গরীব শাহ সড়কের পাশের জমি ইজারা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন পুস্তকসহ সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তবে ভৈরব নদকে পুনঃখননের উদ্দেশ্যে এসব দোকান সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে একাধিকবার তা উচ্ছেদ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য ২০০৫ সালের পর থেকে সরকারি এসব জমির বরাদ্দ আর নবায়ন করা হয়নি। তবে উচ্ছেদে তোড়জোড় শুরু হলেই এই ব্যবসায়ী নেতারা একাধিকবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে উচ্ছেদ তৎপরতা বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে এবার আর শেষ রক্ষা হচ্ছে না। অবৈধ এসব স্থাপনা উচ্ছেদে চূড়ান্তভাবে মাইকিং করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এসব দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ। এ কারণে গতকালই অনেক দোকান থেকে মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ বছর ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোরে এসে ভৈরব খনন কাজ উদ্বোধন করার পর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে তৎপর শুরু হয়। ২৮ জানুয়ারি স্থাপনা সরিয়ে নিতে ২৯৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেয় জেলা প্রশাসন। যার মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ভৈরব গর্ভে রয়েছে ৮৬টি প্রতিষ্ঠান। তবে নোটিশের পরপরই অবৈধ সম্পদ রক্ষায় দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়। তারই অংশ হিসেবে সংঘবন্ধভাবে তারা উচ্চ আদালতে যান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত ভৈরব নদ খননে একনেকে অর্থ বরাদ্দ হওয়ার পর অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিতের কাজ শুরু হয়। ভৈরব নদের সীমানা নির্ধারণের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড অবৈধ স্থাপনার একটি তালিকা তৈরি করে। এছাড়া নদের দুই ধারে যশোর জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমিতে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে প্রশাসন। সবমিলে ভৈরব গর্ভে ও তার পাড়ে সরকারি জমিতে গড়ে তোলা ২৯৬ অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি উচ্ছেদের চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে এক সপ্তাহের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়। নোটিশ পাওয়ার পর দিনই বেশ কয়েকজন নিজেদের বৈধ মালিক দাবি করে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেন। পরে তারা উচ্ছেদ বন্ধে উচ্চ আদালতের দারস্থ হন। ফলে থমকে যায় যশোর অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি ভৈরব পাড়ের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান। তবে এবার আর শেষ রক্ষা হচ্ছে না। আজই উচ্ছেদ করা হচ্ছে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস উদ্বোধন করতে এসে ভৈরব নদ খননের প্রতিশ্রুতি দেন। পরের বছর ১৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভৈরব নদ খননের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। সেই চিঠির পর ভৈরব নদ খননে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়। পরে ভৈরব নদের রিভার বেসিন এলাকার পানিবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ভৈরব নদের এই প্রকল্পটি গ্রহণ করে। এজন্য একনেকে ২৭২ কোটি ৮১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনটি দরপত্রের মাধ্যমে খনন কাজের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। ইতিমধ্যে ভৈরব খননের কাজ বেশ এগিয়ে গেছে। কিন্তু শহর অংশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে না পারার কারণে খনন কাজ নিয়ে জঠিলতা তৈরি হয়।

সচেতন মহল বলছেন, অনেকবার এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে যশোর শহর অংশে পার্কে আদলে বনায়ন ও পায়ে হাঁটা রাস্তা তৈরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে সম্ভব হয়নি। তবে এবার শেষ রক্ষা হলো না। শহরবাসির প্রাণের দাবি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

 

 

খুলনা বিভাগ

আপনার মতামত লিখুন :