যশোরে প্রথমদিনে ভৈরব নদ পাড়ের ৮৪ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

এবিসি বাংলা ডেস্কএবিসি বাংলা ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  10:43 PM, 28 March 2019

>>>রাত পোহালে শহরে হাজি মুহাম্মদ মহশীন সড়কে ভৈরবপাগের আলীশ্বাস ভবন ভাঙা হতে পারে>>>পর্যায়ক্রমে ভাঙা হবে ২৯৬ অবৈধ স্থাপনা
সুনীল ঘোষ: যশোরের ভৈরব নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের প্রথমদিন ৮৪টি স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা সেতু সংলগ্ন এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নামে প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার ইজারা নিয়ে ভবন গড়ে তুলে উপরাংশে ব্যবসা ও আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোরে বসবাস করে আসা ৮৪টি অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৯৬টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা করে এই অভিযান শুরু করেছে। এই তালিকা ধরে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার সকালে যশোরের জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামীর উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। উচ্ছেদে নেতৃত্ব দেন সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ জাকির হোসেন। শহরের দড়াটানা সেতু থেকে বকুলতলা পর্যন্ত ও সেতু সংলগ্ন এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। যদিও আগে থেকে উচ্ছেদ অভিযানের নোটিশ প্রদান ও মাইকিং করায় বুধবার রাতের মধ্যেই অবৈধ স্থাপনার মালামাল সরিয়ে নেয় মালিকরা। তারপরও উচ্ছেদকে ঘিরে দড়াটানা এলাকায় নিরাপত্তা জোরাদার করা হয়। বিপুল সংখ্যক পুলিশ, আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। ছিল ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও এম্বুলেন্স বিপুল সংখ্যক পুলিশ। প্রশাসনের পক্ষকে মাইকিং করে সড়কে চলাচলের উপর সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়। এক পর্যায়ে মুজিব সড়ক ও গাড়ীখানা রোডে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
জানা যায়, ২০১৬ সালে ২৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ বছর মেয়াদী ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’র কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৯২ কিলোমিটার খনন কাজের ৭০ কিলোমিটার কাজ চলমান রয়েছে। শহর অংশের ৪ কিলোমিটার এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ছাড়া খনন কাজ করা সম্ভব ছিল না। এজন্য জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে ২৯৬টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে তাদের সরে যেতে নোটিশ দেয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় আটকে ছিল শহরাংশের উচ্ছেদ কার্যাক্রম। পড়ুন>>>এক নজরে ভৈরব নদপাড়ের যেসব স্থাপনা উচ্ছেদের তালিকায়

এরই মধ্যে যশোরের নাগরিক সমাজ ভৈরব নদের শহরের অংশের দখল উচ্ছেদের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে। পাল্টা মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে ভৈরবপাড়ের অবৈধ স্থাপনার মালিকরা উচ্ছেদ কার্যাক্রম বন্ধের দাবি জানান।

তবে সবকিছু উপেক্ষা করে যশোরবাসীর প্রাণের দাবি বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে  বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। প্রথম দিনে ৮৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছে করা হয়েছে বলে জানান সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ জাকির হোসেন। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে বাকীগুলো উচ্ছেদ করা হবে।
এদিকে দীর্ঘদিন পর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হওয়ায় যশোরের সাধারণ মানুষ খুশি। তাদের দাবি সরকারের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক। এতে যশোরবাসীর উপকার হবে।
যশোরের জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল বলেন, সড়ক ও জনপথ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় ২৯৬টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এগুলো উচ্ছেদ অভিযান করা হবে। তিনি আরও বলেন, কয়েকটি স্থাপনায় উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেগুলো ভাঙা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
শহরবাসীর প্রাণের দাবি ভৈরব নদকে রক্ষা করতে প্রশাসনের এই উচ্ছেদ অভিযানকে তারা সাধুবাদ জানিয়েছেন।
জানা যায়, যশোর জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে দড়াটানা ভৈরব চত্বর থেকে শুরু করে গরীব শাহ সড়কের পাশের জমি ইজারা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন পুস্তকসহ সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তবে ভৈরব নদকে পুনঃখননের উদ্দেশ্যে এসব দোকান সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলে একাধিকবার তা উচ্ছেদ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য ২০০৫ সালের পর থেকে সরকারি এসব জমির বরাদ্দ আর নবায়ন করা হয়নি। তবে উচ্ছেদে তোড়জোড় শুরু হলেই এই ব্যবসায়ী নেতারা একাধিকবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে উচ্ছেদ উদ্যোগ বন্ধ করে দেন। তবে এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি। উচ্ছেদ করতে প্রশাসন ২৫ মার্চ থেকে নোটিশ দেওয়ার পাশাপাশি মাইকিং বরে সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলে। প্রশাসনের এই কঠোর অবস্থানে বুধবার রাতের মধ্যেই বই ও মালামাল সরিয়ে দেয়।

প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ফখির শওকত তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, পরিকল্পিত নগর গড়তে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ছিল সময়ের দাবি । তিনি ভৈরবের যৌবন ফিরিয়ে নৌ চলাচলের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

খুলনা বিভাগ

আপনার মতামত লিখুন :