নিরবে আকাশ ছুঁয়েছে লবণের দাম

চাল ডাল চিনি তেলের দাম নিয়ে যথন হৈ-চৈ; তখন দ্বিগুণ হয়েছে পণ্যটির দাম

বিশেষ প্রতিবেদকবিশেষ প্রতিবেদক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  05:57 PM, 02 January 2023
ফাইল ছবি

আকাশ ছোঁয়া দাম উঠেছে লবণের। চাল, ডাল, আটা-ময়দা, চিনি ও ভোজ্য তেলের দাম নিয়ে দেশজুড়ে যখন হৈ-চৈ হচ্ছে; ঠিক তখন অনেকটা নিরবে লবণের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে ১৪ টাকা কেজির রান্নার লবণের দাম উঠেছে ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। ভাতে খাওয়া আয়োডিনযুক্ত লবণের দাম কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪ টাকা পর্যন্ত। মাস তিনেক আগে ২৪ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে যে চিকন লবণ (আয়োডিনযুক্ত) কিনেছেন ভোক্তা, সেই লবণ কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৮ টাকা। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বেশ কয়েকজন ভোক্তা জানান, দেশে একটি পণ্যের দাম কমলে আরও ৫টি পণ্যের দাম বেড়ে যায়। যশোরাঞ্চলে সবজি বাজারে যখন স্বস্তি বিরাজ করছে ঠিক তখন নতুন করে দাম বেড়েছে লবণ, ভোজ্য তেল ও মাছ-মাংসের দাম।

 

 

বুধ ও বৃহস্পতি দু’দিন যশোর শহরের বড়বাজার এবং স্টেশন বাজার ঘুরে দেখা গেছে-বঙ্গমাতা নামে প্যাকেটজাত মোটা লবণের কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ২৮ টাকা থেকে ৩০ টাকা। মোটা লবণ এলডাস বাজারে নেই। অন্যদিকে ভাতে খাওয়া আয়োডিন যুক্ত প্যাকেটজাত লবণের কেজি বিক্রি হতে দেখা যায় ৪০ থেকে ৪৮ টাকা। কনফিডেন্স এন্ড সলট লিমিটেডের চিকন লবণের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ টাকা দরে। সিটি গ্রুপের চিকন লবণের দা উঠেছে ৪৮ টাকায়। প্যাকেট লবণের দাম দ্বিগুণে ওঠায় কিছু দোকানে ২৫ কেজি ওজনের বস্তাজাত মোটা লবণ বিক্রি হতে দেখা গেছে। এসব বস্তা খুলে প্রতিকেজি বিক্রি করা হচ্ছে ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা।
শহরের হাটচান্নি লক্ষণ স্টোরের সত্ত্বাধিকারী মিঠু পাল জানান, কোম্পানি ভেদে মোটা-চিকন সব ধরণের লবণের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মাস তিনেক আগে মোটা লবণ এলডাস’র কেজি বিক্রি হয়েছে ১৪ থেকে ১৬ টাকা কেজি। এখন এলডাস বাজারে নেই। বঙ্গমাতাসহ বেশকিছু কোম্পানির প্যাকেটজাত মোটা লবণের কেজির দাম বেড়ে হয়েছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, স্টেশন বাজারের জনৈক মুদি ব্যবসায়ী জানান-ডিলাররা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি একটি চক্র লবণের দাম বৃদ্ধির গুজ সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। যেকারণে সরবরাহের ঘাটতির আতঙ্কে ক্রেতারা লবণ কিনে মজুত করছেন।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আয়োডিনযুক্ত লবণের দাম বৃদ্ধি পায়। প্রতিকেজি লবণে ১০ থেকে ১২ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি শুরু হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে। মাস হিসেবে দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ। সূত্রের দাবি-গত বছর একই সময় পণ্যটির দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। অর্থাৎ, বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রটি জানায়-অন্যান্য পণ্যের মতো লবণ ব্যবসায়ীরাও সিন্ডিকেট গড়ে দাম বাড়িয়েছে। তবে গ্যাস সংকটে সবরকম পণ্যের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে জানিয়ে সূত্রটি জানায়-এতে সরবরাহ সংকট কিছুটা কমেছে। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে লবণের দাম বাড়ানো হয়নি।
গ্যাস সংকটে সবরকম পণ্য উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে সরবরারহ সংকট দেখা দিয়েছে। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে লবণের দাম এখনো বাড়ানো হয়নি। সূত্রটির দেয়া তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে উৎপাদন মৌসুমে ১৮ দশমিক ৩২ লাখ টন অপরিশোধিত লবণ উৎপাদিত হয়েছে; যা ৬১ বছরে সর্বোচ্চ। তারপরও ঘাটতি পূরণসহ অসাধুচক্রের অপতৎপরতার লাগাম টেনে ধরতে সরকার বাইরে থেকে লবণের আমদানি করে।
যশোর পুলেরহাটের বাসিন্দা শিবু দাস, কলেজ ছাত্রী (মেস ম্যানেজার) নুরনাহার ও বাহাদুরপুর গ্রামের আব্দুল নামে ৩ ভোক্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন-দেশে ভোজ্য তেল, চিনি, সরু চাল, আটা-ময়দার দাম নিয়ে যখন হৈ-চৈ হচ্ছে ঠিক তখন নিরবে লবণ, মসলা জাতীয় পণ্য, ডিটারজেন্ট পাউডার ও সাবানসহ প্রসাধনী পণ্যের দাম দেড়-দুই গুন বেড়ে গেছে। এরফলে সীমিত আয়ের মানুষের সংসার চালাতে নাভিঃশ^াস উঠেছে।

বাংলাদেশ

আপনার মতামত লিখুন :