জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কাদের প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দেন

ঢাকা অফিস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাদের কাদের বলে ডাকতেই চোখের পাতা নড়ে উঠলো জীবন শঙ্কায় হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরের। তবে কয়েক সেকেন্ড। আইসিইউর ভেন্টিলেশন সাপোর্টে থাকা যে ব্যক্তিটি সকাল থেকে মৃতপ্রায়, সে লোকটি কিনা প্রধানমন্ত্রীর ডাকে চোখের পাতা নাড়ালেন, এটা কি ভ্রম নাকি কাকতলীয়ভাবে নেত্রীর ডাকে সাড়া দেয়া। এরপর নেত্রী আরও দু-একবার ডাকলেন কিন্তু আর কোনো সাড়া মেলেনি।
আরও পড়ুন>>>জীবন শঙ্কায় ওবায়দুল কাদের
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে সিঙ্গাপুর থেকে হৃদরোগসহ একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স আসবেন। তারা এসে রোগীর অবস্থা পর্যালোচনা করবেন। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা ওবায়দুল কাদেরকে এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরে নেয়া সম্ভব না।
অন্যদিকে আ’লীগের ডাকসাইটের এই নেতাকে দেখতে হাসপাতারে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও দলীয় নেতাকর্মী ভীড় করছেন।
জানা যায়, রোববার বিকেলে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে আসেন। এ সময় কাদেরের শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজখবর নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজির অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামান জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘মিরাকল কিনা জানি না, উপস্থিত সবাই দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাদের কাদের ডাকার পর দু-তিন সেকেন্ডের জন্য ওবায়দুল কাদেরের চোখের পাতা নড়ে ওঠে।’
ডা. জামানের কাছে ওবায়দুল কাদেরের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফ করবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন চিকিৎসক জানান, ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন। উচ্চমাত্রার রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও মারাত্মক ধরনের হার্ট অ্যাটাকের কারণে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্রমেই অকার্যকর হয়ে পড়ছে। আগে কিডনিতে সমস্যা না থাকলেও এখন কিডনিও বিকল হয়ে পড়ছে। সার্বিকভাবে তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। একই বক্তব্য আনুষ্ঠানিকভাবে দিয়েছেন হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যানও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিঙ্গাপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সন্ধ্যা ৭টায় আসার কথা রয়েছে। সকালেই সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার বিভিন্ন রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল।
একজন চিকিৎসক বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন জেনেও ভালোবাসার টানে তাকে একনজর দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসছেন বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী, এমপি, বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনীতিবিদ ও দলীয় নেতাকর্মীরা। এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে ইনফেকশনের ঝুঁকি মারাত্মক। ওবায়দুল কাদেরের ক্ষেত্রে রোগের পাশাপাশি সংক্রমণের ঝুঁকিও মারাত্মক হয়ে উঠছে বলে ওই চিকিৎসকরা জানান।
এরআগে সকালে বুকে ব্যথা অনুভূত হলে দ্রুত ওবায়দুল কাদেরকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) ২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন তিনি।
সকাল থেকেই তাকে দেখতে হাসপাতালের ডি-ব্লকের সামনে ভিড় করেন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে স্রোতের মতো হাসপাতালে আসছেন নেতাকর্মীরা। তারা ভেতরে প্রবেশ করতে না পারলেও ডি ব্লকের গেটের সামনে ভিড় করছেন। এতে অন্য রোগীরাও বিব্রত বোধ করছেন।
রোববার সকাল থেকেই চিকিৎসকরা বার বার বলছেন হাসপাতালে ভিড় না করতে। প্রধানমন্ত্রীও ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে এসে এ বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও নেতাকর্মীরা হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন।
সকাল সাড়ে ৭টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বুকের ব্যথা নিয়ে ভর্তি হন ওবায়দুল কাদের। অসুস্থ ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে ও তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে হাসপাতালে ভিড় করছেন নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও এসেছেন। ইতোমধ্যে হাসপাতালে তাকে দেখতে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, এইচ টি ইমাম, হাসানুল হক ইনু, সালমান এফ রহমান, আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আহমদ হোসেন, অসীম কুমার উকিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউছার, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ফরিদুন্নাহার লাইলী, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ইসাহাক আলীখান পান্না, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ প্রমুখ।
সর্বশেষ বিকেলে ব্রিফিংয়েও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া সাংবাদিকদের জানান, ‘আপনারা প্রচার করেন। কেউ যেন এখানে না আসে। দর্শনার্থী এলে খুব অসুবিধা হয়। চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটে। এছাড়া ডি ব্লকটা পুরোটাই হার্টের রোগী। তারাও অসুবিধা বোধ করে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, এরপর যদি আমিও আসি আমাকেও ঢুকতে দেবেন না।’
বাংলাদেশ