চৌগাছায় শিলা বৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে কৃষকের সুখ

চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা:যশোরের চৌগাছা উপজেলায় সম্প্রতি বিশাল আকৃতির শিলা বৃষ্টি ইরি ধান চাষিদের দুঃশ্চিন্তায় ফেলেছে। চলতি মৌসুমে ইরি ধানের ব্যাপক চাষ হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি গ্রামের মাঠের পর মাঠ যে দিকে চোখ যাই, সেদিকেই সবুজের সমারোহ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে বাম্পার ফলন হবে এমনটিই প্রত্যাশা করছেন চাষী। কিন্তু বছরের শুরুতে আবহাওয়া যে রুপ ধারন করেছে তাতে কৃষকের নাওয়া খাওয়া এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। আর মাস খানেক পরেই তাদের কষ্টের ফসল ঘরে উঠবে। শেষমেষ আবহাওয়া যদি এই অবস্থায় থেকে যায় তাহলে অধিকাংশ চাষিকে পথে বসার উপক্রম হবে বলে মনে করছেন অনেকে।
সূত্র জানায়, কৃষি নির্ভর উপজেলা হিসেবে খ্যাত যশোরের চৌগাছার সব শ্রেনীর কৃষক প্রতি বছর শীত মৌসুম এলেই ব্যাপক ভাবে ইরি ধানের চাষ করেন। চলতি মৌসুমেও তার বিন্দু মাত্র কমতি হয়নি। তবে এ বছরের শুরুতে আবাহাওয়া যে বিরুপ আচারণ করছে তাতে কৃষকরা চরম দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে ইরি ধানের চাষ হয়েছে। বিগত বছর গুলোতে অন্য সব ফসলের কাংখিত মূল্য না পেয়ে কৃষক ইরি ধানের চাষের দিকে ঝুকে পড়েছেন। আর ধান চাষ করে তারা বেশ লাভবানও হচ্ছেন। উপজেলার ফুলসারা, পাশাপোল, ধুলিয়ানী, স্বরুপদাহ, নারায়নপুর, সুখপুকুরিয়াসহ প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যাপক ভাবে চাষ হয় ইরি ধানের। মাটির গুনাগুন বিবেচনায় একএক এলাকাতে একেক জাতের ধান চাষ হয়ে থাকে। তবে মিনিকেট,বাসমতি, সুভললতা, কাজললতাসহ বিভিন্ন প্রকার হাইব্রিড জাতের ধান চাষ বেশি লক্ষনীয়। চলতি মৌসুমে ধান চাষের পর হতে এ পর্যন্ত তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি কৃষককে। কিন্তু হঠাৎ করে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর হতে অবিরাম শিলায় কৃষককে ভাবিয়ে তুলেছে। গতকাল উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম এলাকা ঘুরে কৃষককের সাথে কথা বলে তাদের আশংকার কথা জানা গেছে। উপজেলার বহিলাপোতা গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান। চলতি মৌসুমে তিনি ৫ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের ইরি ধানের চাষ করেছেন। এই কৃষক জানান, ইরিধান চাষে ব্যায় তুলনা মুলক বেশি কিন্তু ভাল ফলন হলে লাভ না হলেও লোকসান গুনতে হয়না। কারণ ধানের পাশাপাশি বিচেলীও এখন বেশ ভাল দরে বিক্রি করা যায়। সেদিক বিবেচনা করে এ অঞ্চলের চাষিরা মৌসুম এলেই ধান চাষে মনোযোগী হয়ে পড়েন। কিন্তু চলতি মৌসুমে হঠাৎ শিলার আবির্ভাব সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। এখন যে মৌসুম চলছে তাতে প্রতিটি ক্ষেতের ধান শীষ বের হতে শুরু করেছে। এখন কিছুটা জোরে বাতান হলেও ধানের জন্য ক্ষতি। আর যদি ঝড়ো হাওয়া হয় তাহলে সব ধানের চিটা হয়ে যাবে। চাঁদপাড়া গ্রামের ধান চাষি রবিউল ইসলাম এ বছর ৬ বিঘা জমিতে ইরি ধানের চাষ করেছেন। এই কৃষক জানান, গত মঙ্গলবার হঠাৎ শিলায় ধানের বেশ ক্ষতি হয়ে গেছে। কারন প্রতিটি জমির ধান এখন শীষ বের হচ্ছে। বিশাল আকৃতির ওই শিলার কারনে ধানে চিটা হয়ে যাবে বলে তিনি আশংকা করছেন। কৃষক হায়দার আলী বলেন, ইরি ধানের মৌসুমটায় দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকে এই দিকটি বিবেচনা করেই আমরা ধান চাষ করি। অন্য বছর গুলোতে ধান যখন পাকতে থাকে বিশেষ করে ওই সময়টা আবহাওয়া খারাপ হয়। কিন্তু এ বছর অনেক আগে ভাগেই আবাহওয়া খারাপ হওয়াতে মহা দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। জানি না এবছর ধান সুষ্টু ভাবে ঘরে উঠবে কিনা। কৃষকরা জানান, ১ বিঘা ধান চাষে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এ জনপদের অধিকাংশ কৃষক জমি লিজবর্গা নিয়ে দায় দেনা হয়ে ধান চাষ করেছেন। সুষ্ঠু সুন্দর ভাবে যদি এই ফসল ঘরে তুলতে পারে তখনই কৃষকের স্বস্তি। আর যদি প্রাকৃতিক দূর্যোগ আসে তাহলে সব কিছুই শেষ হয়ে যাবে বলে তারা মনে করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন বলেন, এ বছর লক্ষমাত্রার চেয়ে কিছু কম জমিতে ধান চাষ হয়েছে। সম্প্রতি শিলাতে ধানের যেন ক্ষতি তেমন না হয় তার জন্য ব্লক সুপারভাইজারা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। আর যদি কোন দুর্যোগের কবলে না পড়ে তাহলে বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি মনে করছেন।