চৌগাছায় অর্ধশত বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী পাননি সরকারি সুযোগ সুবিধা

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছায় এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানে তিনি চরম অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী অনেকে। যে ভোটারের ভোটে তিনি ইউপি সদস্য হয়েছেন, তাদের বাদ রেখে নিকট আত্মীয় স্বজনদের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন। স্থানীয়রা মেম্বরের এই পক্ষপাতমুলক ঘটনা তদন্তপূর্বক আইনাননুগ ব্যবস্থা গ্রহনের প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্র জানায়, উপজেলা সদরের গা ঘেঁষা ইউনিয়ন স্বরুপদাহ। এই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন। তিনি ৭নং ওয়ার্ডের ছোট কাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। ৭নং ওয়ার্ডের দিঘড়ী গ্রাম এলাকার একটি অবহেলিত গ্রাম বলে সকলের কাছে পরিচিত। এই গ্রামে অন্তত সহ¯্রাধিক ভোটারের বসবাস। গ্রামবাসি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে জালাল উদ্দিন মেম্বর নির্বাচিত হয়ে দিঘড়ী গ্রামবাসির সাথে বিভ্রাতাসুলভ আচারণ করে আসছেন। এই গ্রামটিতে অন্তত অর্ধশত বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার যোগ্য মানুষের বসবাস। কিন্তু মেম্বর এই সকল মানুষকে পাশ কাটিয়ে তার নিজের গ্রাম ছোট কাকুড়িয়ায় অসংখ্য মানুষকে সরকারি সুযোগ সুবিধার আওতায় নিয়ে এসেছেন। যারা বয়স্ক, বিধবা কিংবা প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার যোগ্য না, তারাও এই গ্রামটিতে এসব সুযোগ পাচ্ছেন বলে অভিযোগ। সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত দিঘড়ী গ্রামের মৃত শাহাদৎ ঢালীর ছেলে বাবুর আলী (৮২) বলেন, আমি একজন বৃদ্ধ মানুষ, রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন আর চলাফেরা করতে পারি না। শুনেছি সরকার বয়স্ক মানুষদের অনেক কিছু দিচ্ছে কিন্তু আমি তো কোন দিন কিছুই পেলাম না। আমাদের মেম্বর জালালের কাছে গেছি তাকে বলেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। দিঘড়ী গ্রামের উত্তরপাড়ার মৃত মকছেদ আলীর ছেলে আয়ুব হোসেন (৮০) বলেন, বয়স অনেক হয়েছে, আর কয়দিনই বা বাঁচবো। এই বয়সে এসে অনেক কষ্টে দিন পার করছি।
একই পরিবারে তিন বোন বাকপ্রতিবন্ধী। তারা হলো সাহাবক্সের মেয়ে শহরবানু (৩০), নবিছন বিবি (২৫) ও মর্জিনা খাতুন (২২)। বাকপ্রদিবন্ধীদের মা রিজিয়া বেগম বলেন, অভাব অনটনের সংসারে এই তিন মেয়েকে নিয়ে বড় বিপদের মধ্যে দিন পার করছি। তারা ছোট বেলা থেকেই কথা বলতে পারে না। নিজেদের সংসার চলার কথা বিবেচনা করে এই তিন বোন অন্যের ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করে। শুনেছি সরকার প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেয়। আমি মেম্বর জালালের কাছে অনেকবার গেছি, তাদেরকে ভাতার আওতায় নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু গরীবের পাশে কেউ থাকে না, মেম্বরও নেই। আমার একটি মেয়েও সরকারি কোন সুযোগ পাই না। বাজার পাড়ার মৃত আব্দুস সালামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৭৮) রোগে শোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পথযাত্রী। এই বৃদ্ধা জানান, শরীরে অনেক রোগে বাসা বেধেছে, কোন টাকা নেই, আয় রোজগারের মানুষও নেই। তাই অর্ধহারে অনাহারে অনিক দিন পার হয়। সময় মত একটু ওষুধও খেতে পারিনা। সরকার আমাদের মত মানুষের জন্য ভাতা দিচ্ছে কানে শুনেছি কিন্তু পাইনি। মেম্বরকে বলেও কোন লাভ হয়নি বলে তিনি জানান। মনোয়ারা, বাবুর আলী, আয়ুব হোসেন, রিজিয়া বেগমের মত এই গ্রামে মৃত ওমর আলীর স্ত্রী সখিনা বেগম (৮০), লোকমান হোসেনের স্ত্রী সাইরা বেগম (৭০), খলিল ভুইয়ার স্ত্রী রাবিয়া বেগম (৭৫), মৃত আবুল কাশেমের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৬৫), সুলতানের মেয়ে বিবি খাতুন (৭০), কদর আলীর মেয়ে সবেদা বেগম (৮০), মন্ডল সর্দারের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৭৯), আয়ুব হোসেনের স্ত্রী সোনাভান (৬৮), সুলতান হোসেনের স্ত্রী ফুলজান বিবি (৭২), মৃত ইয়াকুব সর্দারের ছেলে খলিলুর রহমান (৯০), মৃত আব্দুর রহমানের স্ত্রী সাবিহা বেগম (৬৫), মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে রুস্তম আলী (৮১), মৃত শাহাদৎ হোসেনের স্ত্রী তৈয়েবা খাতুন (৮০), মৃত ইরাদ আলীর স্ত্রী জাহেরা বেগম (৮১), মৃত আতর আলীর স্ত্রী হুনুফা বেগম (৯০), মৃত মনোর উদ্দিনের স্ত্রী সুখজানসহ (৭৫) এই গ্রামটিতে অন্তত ৫০ জন ব্যক্তি সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, মেম্বর জালাল উদ্দিন পাশ্ববর্তী ছোট কাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। সে তার নিজের গ্রামে যারা সরকারি সুযোগ সুবিধা কখনও পাওয়ার যোগ্য না, তাদেরকে সুযোগ দিচ্ছে অথচ পাওয়ার যোগ্যরা আজ বঞ্চিত। এরজন্য ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকেও তারা দায়ি করছেন। এ বিষয়ে মেম্বর জালাল উদ্দিনের ০১৭১৩৬৮৯৯৬১ মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেনি। তবে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার অজানা ছিল। স্ব-স্ব ওয়ার্ডের তালিকা মেম্বররা প্রস্তুত করে আমার কাছে জমা দেন। আমি সেটি অনুমোদন করি। বিষয়টি আজ জেনেছি। অবশ্যই সরকারি সুবিধা পাওয়ার যোগ্যরা সুযোগ সুবিধা পাবে।
খুলনা বিভাগ