কী ছিল মোটিভ-জানতে চান ভুক্তভোগী মহল

জটিলতা নিরসনের খবরে উচ্ছ্বাস, দেখছেন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন

বিশেষ প্রতিবেদকবিশেষ প্রতিবেদক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  04:25 PM, 20 October 2022
ফাইল ছবি

যশোর বিসিকের প্লট গ্রহীতাদের নামে অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল রেজিস্ট্রিকরণে আইনের মারপ্যাচের নিরসন ঘটেছে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল সম্পাদনে আইনগত বাধা নেই জানিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য যশোর জেলা রেজিস্ট্রারকে চিঠি পাঠিয়েছেন মহা-পরিদর্শক (নিবন্ধন) শহীদুল আলম ঝিনুক।

বিষয়টি জেলার সকল সাব-রেজিষ্ট্রারকে অবহিতকরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরফলে শিল্প কলকারখানা কর্তৃপক্ষ চাইলে প্লট মর্টগেজ রেখে ব্যাংক ঋণ নিতে পারবেন।

 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর ঝুমঝুমপুর শিল্প নগরীর প্রধান মেহেদি হাসান। চিঠি হাতে পাওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন যশোর জেলা রেজিস্ট্রার শাহজাহান সর্দার।

এদিকে আইনের মারপ্যাচ কেটে যাওয়ার খবরে শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। সংকট কাটিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারা। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন কী ছিল জেলা রেজিস্ট্রারের মোটিভ ? তিনি কী আইন জানেন না নাকি বিপাকে ফেলে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার কোনো উদ্দেশ্যে বেকে বসেছিলেন-এমন প্রশ্ন অনেকের। ভুক্তভোগীদের দাবি-সময় মতো ঋণ পাওয়া গেলে অনেক আগেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব ছিল কিন্তু আইনের মারপ্যাচের কারণে এরমধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।

 

যশোর ঝুমঝুমপুর বিসিক অফিস সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে নিয়োজিত সরকারি খাতের মূখ্য প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৭ সালে সংসদীয় আইনের মাধ্যমে বিসিকের জন্ম। বিসিকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উদ্যোগে দেশে প্রচুর শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টি ও শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। তবে যশোর ঝুমঝুমপুর বিসিকের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬২ সালে। ৫০ দশমিক ৪ একর জমিতে প্লট রয়েছে ২৯২টি। ১২০ জন শিল্প উদ্যোক্তা এসব প্লটের বরাদ্দ পেয়ে গড়ে তুলেছেন নানা রকমের শিল্প কলকারখানা।

 

যশোর ঝুমঝুমপুর শিল্প নগরীর প্রধান মেহেদি হাসান জানান, বর্তমানে ১১৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। কিন্তু বৈশি^ক মহামারি করোনার ধাক্কায় প্রতিষ্ঠানগুলো চরমভাবে আর্থিক ক্ষতিরমুখে পড়েছে। অর্থ সংকটের কারণে অনেকেই পণ্য উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। অনাকাঙ্খিত এই সংকট থেকে উত্তরণ ও নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় যশোর বিসিকের অনন্ত ৩০টি শিল্প কলকারখানার মালিক বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের আবেদন করেন কিন্তু যশোরের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো আইনের মারপ্যাচ দেখিয়ে বিসিকের প্লট ইজারা গ্রহীতাদের নামে অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল সম্পাদনে রাজি হয়নি। যারপ্রেক্ষিতে প্লট ইজারা গ্রহীতাদের নামে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল’ সম্পাদনে আইনগত বাধা নেই মর্মে বিসিক প্রত্যায়নপত্র দেয় কিন্তু যশোর জেলা রেজিস্ট্রার অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল রেজিস্ট্রিকরণে রাজি হননি। এক পর্যায়ে বিসিক কর্মকর্তারা জেলা রেজিস্ট্রারের সাথে দেখা করে আইনগত বাধা না থাকার বিষয়টি অবহিত করেন।

 

এ সময় তারা ২০১৭ সালের মে মাসে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ মোহাঃ জহিরুল হক, অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান ও যুগ্ম সচিব উন্মে কুলসুম বিসিকের প্লট ইজারাগ্রহীতার নামে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল সম্পাদনে আইনগত বাধা নেই মর্মে মতামত দিয়ে যে পত্র পাঠান একই বিভাগের সিনিয়র সচিবের দপ্তরে ও ১০ জুলাই সিনিয়র সহকারী সচিব আনোয়ারুল হক প্রেরিত মহাপরিদর্শকের (নিবন্ধন) দপ্তরে চিঠি পাঠানো চিঠি দেখানো হয় জেলা রেজিস্ট্রারকে কিন্তু এসব প্রমাণপত্র গুরুত্ব পায়নি জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে। এরফলে ব্যাংক ঋণ পাওয়ার বিষয়টি ঝুলে যায়।

 

বিসিকের প্রমোশন অফিসার আজাহার আলী জানান, যশোরে নিবন্ধিত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কলকারখার সংখ্যা দুই সহ¯্রাধিক। করোনার ধাক্কায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ফের ঘুরে দাঁড়াতে বিসিক থেকে সর্বাত্বক সহযোগীতা করা হচ্ছে।

যশোর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, রেসকো এন্ড ব্রেড ফ্যাক্টরি ও মদিনা অটো নামে দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান ঋণের জন্য আবেদন করে রেখেছে কিন্তু পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল দিতে না পারায় ঋণ দেয়া সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন ব্যাংকে একই কারণে ঋণ বিতরণ আটকে আছে বলেও জানায় সূত্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঝুমঝুমপুর বিসিকের একাধিক শিল্প উদ্যোক্তা বলেন, ত্রিমুখী চাপের মুখে বৈশ্বিক মহামারি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি। বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যেকারণে বেড়েছে সার, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে ভর্তুকি। বেড়েছে সরকারের সুদ পরিশোধ খাতের ব্যয়। দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। সূত্রগুলোর অভিযোগ সরকার শিল্প কলকারখানায় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু যশোর বিসিকের শিল্পাদ্যোক্তাদের ঘুরে দাঁড়াতে দেয়নি যশোর রেজিস্ট্রি অফিস। আইনের মারপ্যাচ দেখিয়ে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল রেজিস্ট্রি করেনি। যেকারণে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যশোরের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তারা।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২০) অক্টোবর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে যশোর জেলা রেজিস্ট্রার শাহজাহান সর্দার দৈনিক কল্যাণকে বলেন-আইনি জটিলতা কেটে গেছে। বিসিকের প্লট গ্রহীতাদের নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল সম্পাদনের নির্দেশ দিয়েছেন মহা-পরিদর্শক (নিবন্ধন)। গত ১১ অক্টোবর চিঠি হাতে পাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন সরকারের এই উর্দ্ধতন কর্মকর্তা।

অর্থনীতি

আপনার মতামত লিখুন :