কাভার্ড ভ্যানের চাপায় প্রাণ গেল ৫ জনের

এলাকাজুড়ে নেমেছে শোকের ছায়া

মণিরামপুর প্রতিনিধিমণিরামপুর প্রতিনিধি
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  11:59 AM, 02 December 2022
নিহত হাবিবুর ও শিশুপুত্র তাহসিন

শিশুপুত্র তাওসিন খেতে চেয়েছিল পরোটা। ছেলের ইচ্ছে পূরণে বাবা হাবিবুর রহমান তার হাত ধরে আসছিলেন পাশের বাজারে কিন্তু পরোটা খাওয়া হলো না বাপ-বেটার। দানবের গতিতে ছুটে এসে একটি কাভার্ড ভ্যান চাপা দেয় বাবা-ছেলে । মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় সব। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান শিশুপুত্র তাওসিন ও পিতা হাবিবুর রহমান। এখানেই শেষ না। এঘটনায়  মারা গেছেন আরো ৩জন।

মর্মান্তিক ও বেদনা দায়ক এ ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার যশোর-মণিরামপুর সড়কের বেগারিতলা এলাকায়। প্রাণ হারিয়েছেন যারা তাদের মধ্যে রয়েছেন-বেগারীতলা বাজারের পাশের টুনিয়াঘরা গ্রামের হাবিবুর রহমান (৪০), তার মাদ্রাসায় পড়া ছেলে আরাবুর রহমান তাওসিন (৬), একই গ্রামের সামছুর রহমান (৭০), তৌহিদুল ইসলাম (২৮) ও জয়পুর গ্রামের জিয়াউর রহমান (৩৫)।

এ ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা এলাকায়। স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে আশপাশের পরিবেশ।

এদিকে স্বামী-পুত্রের মৃত্যুতে মুহূর্তেই নির্বাক হয়ে যায় শিশুপির মা তহমিনা। বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। কাউকে দেখলে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকছেন। কথা বলছেন না। মাঝে মাঝে সন্তানের নাম ধরে আহাজারি করছেন। স্বামী আর সন্তানহারা এই নারীর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে টুনিয়া ঘরার আকাশ বাতাস। অনেকেই শান্তনা দেয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেন। তাদের কান্নায় অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি।
অনেক চেষ্টার পর হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠে তহমিনা খাতুন বলেন “আমার কলিজার টুকরারে এভাবে আল্লাহ নিয়ে গেলো কেন ? সন্তানের সাথে আমার স্বামীরেও। আমার ঘরটা একেবারে ফাঁকা হয়ে গেল। আমার পাখিটা কত মা মা করে পাগল করে দিতো, আর কেউ মা বলে ডাকবে না। আল্লাহ এ তোমার কেমন বিচার-প্রশ্ন করেন তাহমিনা।

টেলিভিশন দেখতে দেখতে সকালে ছোট ছেলে বায়না ধরে পরো খাবো । ছেলে আমার আর পরোটা খেতে পারলো না। আকাশের দিকে দুই হাত তুলে আর্তনাদ করে তিনি বলতে থাকেন, ‘কি এমন গুনাহ করেছিলাম আল্লাহ, ? এমন শাস্তি কেন আমারে দিলে ? এখন আমি কি নিয়ে বাঁচবো। আমাদের কি হবে বলে ফের মুর্ছা যান তাহমিনা।

তহমিনা খাতুনের সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত আরেক ছেলে তাহমিদ রহমান তাজিমকে ঘিরে দেখা যায় প্রচুর মানুষের জটলা। তাকে ঘিরে সান্তনা দিচ্ছেন নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশিরা। তারা তাজিমকে
বুঝাচ্ছেন বড় হতে হবে, সংসারের হাল ধরতে হবে। কান্না করলে হবে না! তুমি শক্ত না হলে তোমার মা আরো ভেঙে পড়বে–ইত্যাদি।

তাহমিদ রহমান তাজিম বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ছোট্ট ভাই তাওসিন মাদ্রাসা যাওয়ার আগে বায়না ধরতো পরাটা খাওয়ার। পরাটা না খেতে দিলে মাদ্রাসাই যাবে না বলেও জেদ ধরতো। বাবার হাত ধরে বাড়ির পাশেই বেগারিতলা বাজারের একটি হোটেলে যাচ্ছিলেন। হোটেলে প্রবেশের আগেই যশোর থেকে সাতক্ষীরাগামি একটি কাভার্ড ভ্যান বাবা আর ছোট ভাইকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় তারা। কান্না জড়িত কন্ঠে তাজিম বলেন, “ওরে আব্বু তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গেলে। এখন আমাদের কে দেখবে। আদরের তাওসিনও চলে গেল। আমরা যে নিঃস্ব হয়ে গেলাম!
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে যশোর থেকে সাতক্ষীরাগামী একটি কাভার্ডভ্যান যশোর-মনিরামপুর সড়কের ব্যাগারিতলা এলাকায় পৌঁছালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এ সময় কাভার্ডভ্যানটি রাস্তার পাশে হোটেল, চায়ের দোকানসহ অন্তত দশটি দোকানে ধাক্কা দেয়। এতে চায়ের দোকান ও হোটেলে নাস্তা করতে আসা এবং পথচারী মিলে পাঁচজন মারা যান।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ড্রাইভার ঘুমে অচেতন অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এ সময় কাভার্ডভ্যানটি রাস্তার পাশে হোটেল, চায়ের দোকানসহ অন্তত ১০টি দোকানে ধাক্কা দেয়। দোকানগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে ঘাতক কাভার্ড ভ্যান।

মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মো. মনিরুজ্জামান জানান , ৪জনের মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আর এক শিশুর মরদেহ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘাতক ড্রাইভার ও হেলপার পালিয়ে গেছে। তাদের আটক করতে অভিযানে রয়েছে পুলিশ।

 

বাংলাদেশ

আপনার মতামত লিখুন :