কথিত পীরের রোষে ৫ শ্রমিক
কথিত পীরের ফু-ফা দেয়া ১০১ কলস পানি দিয়ে প্রত্যেকে গোসল, খাওয়ানো হয় ফু-ফা দেয়া রুটি

পটুয়াখালীর গলাচিপায় গরু চুরির অপবাদ দিয়ে রাইস মিলের ৫ শ্রমিকেকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের পর কথিত পীরের পড়ানো ডিম সিদ্ধ ও পীরের নির্দেশনা অনুযায়ী মাথায় ১০১ কলস পানি ঢেলে ওই শ্রমিকদের গোসল করানো হয়। এর আগে পীরের পড়ানো রুটি শ্রমিকদের খাওয়ানো হয়।
রবিবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে গলাচিপা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওই শ্রমিকদের চারজনকে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়া আশঙ্কাজনক হওয়ায় একজনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার শিকার শ্রমিকরা হলো- রহিম খা (৬৫), বেল্লাল বিশ্বাস (৩০), আবু তালেব গাজী (৩৫), আলাউদ্দিন সরদার (৩৫) ও মোস্তফা (৫৫)।
তারা সবাই গলাচিপা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের শাহজালাল রাইস মিলের শ্রমিক। নির্যাতনের শিকার রাইস মিল শ্রমিক সরদার রহিম খা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের বলেন, কথিত পীরের কাছ থেকে রুটি পড়া এনে চোর সন্দেহে তাকে জোর করে রুটি খাওয়ায় গরুর মালিক কুদ্দুস প্যাদা। একই সঙ্গে তার শ্রমিকদের পড়ানো রুটি খাওয়ানো হয়। এর কিছুক্ষন পরে তিনিসহ শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাদের ওপর শুরু হয় নির্যাতন-মারধর।
এসময় তারা চেতনা হারিয়ে ফেলে। পরের ঘটনা তারা আর বলতে পারেন না। স্থানীয় শত শত মানুষের সামনেই চলে এই কর্মযজ্ঞ। রহিম খা আরো বলেন, শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের ৭৫ হাজার টাকা তার সঙ্গে ছিলো। ঘটনার পর থেকে সেই টাকা ও তার ব্যবহৃত মোবাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা নির্দোষ, নিরীহ শ্রমিক বিনা দোষে এমন নির্যাতন করলো। এখন আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। এদিকে প্রত্যাক্ষদর্শী স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কুদ্দুস প্যাদার গোয়াল থেকে পাঁচটি গরু চুরি হয়েছে। সেই গরু চুরির সন্দেহে রবিবার ওই শ্রমিকদের ধরে পীরের পড়ানো রুটি খাওয়ানো হয়। পরে পীরের নিদের্শ অনুযায়ী মাথায় ১০১ কলস পানি ঢেলে গোসল করানো হয়। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই শ্রমিকদের গলাচিপা থানা পুলিশের সহায়তায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কাজী আবদুল মমিন বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার পর প্রাথমিক লক্ষণ দেখে মনে হয়েছে শ্রমিকদের যে রুটি খাওয়ানো হয়েছে তাতে ফুট পয়জনিং ছিলো। এছাড়া ওই অবস্থায় তাদের শরীরে একাধিকবার পানি দেয়ায় ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় অসুস্থ হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে গলাচিপা থানার ওসি শোনিত কুমার গায়েন সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি জানার পরে পুলিশ পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ভিকটিমের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।