একটা বেকার জীবনের আর্তনাদ-অমল চন্দ্র সরকার

এবিসি বাংলা ডেস্কএবিসি বাংলা ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  07:49 PM, 13 March 2019

আমি তখন খুব ছোট,বেশি একটা ভালো ভাবে বুজতে শিখিনি।
তখন দেখেছি আমার পেছনে বাবার অগাধ শ্রম
আমায় মানুষের মতে মানুষ বানাবে,পড়া লিখা করাবে,চোখে নানান স্বপ্ন।
দিনরাত পরিশ্রম করে, নাখেয়ে না ঘুমিয়ে অর্থ রোজগার করে আমায় যোগান দিবে বলে।
সততা নিষ্ঠা আর মানবতার এক উজ্ঝল মুর্তি আমার বাবা,যদিও লেখাপড়া করেন নি।
কিন্তু আমায় পড়া লিখা শিখানোর প্রবল ইচ্ছা তার মনে,যেন আমি মূর্খ না হই
যেন বাবার মতো কাজ না করতে হয়, অবহেলিত না হতে হয় শিক্ষাপুর্ন সমাজের কাছে।
উচ্চশিক্ষিত হয়ে যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারি,একটা চাকুরী করে যেন বাবার সেই লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি।
বাবার সারাজীবনের শ্রম লাঘব করে হাসি ফুটাতে পারি,বাবার ও গর্ব আমার মতো গর্বিত সন্তান নিয়ে।
আমিও বড় হতে লাগলাম।একে একে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক শেষ পর্যন্ত মাস্টার্স পাশ করলাম।
বাবার চকুরী চিলনা বলে সোনার টুকরা জমি গুলো তুলোর দামে বিক্রী করতে হলো।শুধু মাথা গোঁজার এক চিলতে ঠাঁই ব্যাতিত।
তারপরও বাবার মনে প্রশান্তি যদি আমার একটা ভালো চাকুরী হয়,জীবনটা তো সুখের হবে।
কখনও কোন রাজনীতির সাথে জড়াইনি, বাবা দরিদ্র বলে তবে হতাশ হইনি।
বাবার মতোই সততা নিষ্ঠা আর ন্যায়পরায়নতা নিয়ে গভীর আশায় বুক বেঁধে পথ চলতে শুরু করলাম।
কিন্তু কি পেলাম, দেখতে দেখতে আমার সরকারী চাকুরীর বয়স পেরিয়ে গেলো,বেসরকারী চাকুরী ও হয়নি।
বাবার স্বপ্ন আজ ধূলিসাৎ, সততা নিষ্ঠা আর মানবতা আজ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, উচ্চশিক্ষিত সমাজের কাছে।
মোটা অংকের অর্থের কাছে বাবার শ্রম, সততা,নিষ্ঠা, আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা সবই মুল্যহীন।
বাবার সেই ক্ষমতা নেই,জমি জমা ও নেই টানাপোড়েন সংসার,প্রতিনিয়ত অমোঘ অন্ধকার আমার সামনে ভেসে ভেড়ায়।
বয়স ৩১ পার হয়ে গেছে বিয়ে করার সাহস নেই,বাবা ও মায়ের সেবাই রীতিমতো করতে পারিনা।
জীবনের গন্ডিতে কি ভাবে সামনের দিন চলবো জানিনা,শুধু হাহাকার আর নিরাশার আঁধার।
হে শিক্ষিত সমাজ তোমাদের কারও জানা আছে, আমার বাবার কি অপরাধ, আমারই বা কি অপরাধ।
বাবার টাকা নেই,আমি সততা ওনিষ্টা নিয়ে চলছি বলেই কি আমার ঠাঁই আস্তাকুঁড়ে হবে।
আমি রাজনীতি করিনা বলেই কি জীবন এভাবে বিপন্ন হবে।
আমি আজ বেকার, পরিবার তথা সমাজের বোঝা। আমার স্বপ্ন সাধনা এবং শিক্ষা সবই আজ নির্লিপ্ত।
বেকারত্ব আমার তথা আমার পরিবারিক সুখ কেড়ে নিয়েছে, আমার জীবনে বেঁচে থাকার মুহুর্তগুলো বিভীষিকাময়
করে তোলেছে।আমি বাংলাদেশের সন্তান,বাংলা আমার মা।।আমি তথা লক্ষ বেকার যুবকদের
পক্ষ থেকে আজ বাংলা মায়ের নিকট একটাই প্রার্থনা,আমাদের এই বেকার জীবন মুক্ত করে দাও।
আর দশটা ছেলের মতো আমাদের বাবা ও মাকে সেবা করার সুযোগ দাও।
আমরা কথা দিচ্ছি আমাদের সততা নিষ্ঠা আর ভালোবাসা দিয়ে তোমার আঁচল সোনায় ভরিয়ে দেবো।
আমাদের আর্তনাদ শুনে মুখ ফিরিয়ে নিওনা।। আমাদের বাঁচতে দাও।।আমাদের বাঁচাও।

ফিচারস top

আপনার মতামত লিখুন :