আ’লীগে-আ’লীগে ভোট শেষে সহিংসতা: গ্রামে নেই কোন পুরুষ

এবিসি বাংলা ডেস্কএবিসি বাংলা ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  07:20 PM, 21 March 2019

জয়পুরহাট সংবাদদাতা: উপজেলা নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মোসলেমগঞ্জ বাজার এলাকায় শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় উদয়পুর ইউপির চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী দাদা ভাই ও মাত্রাই ইউপির চেয়ারম্যান আ ন ম শওকত হাবিব তালুকদার লজিকসহ ৪৭ জনকে আসামি করে অজ্ঞাত ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এ অবস্থায় গ্রেফতার এড়াতে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে স্থানীয় কয়েকটি গ্রাম।

জানা গেছে, ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত কালাই উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মিনফুজুর রহমান মিলন তৃতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা মাত্রাই ইউপির চেয়ারম্যান আ ন ম শওকত হাবিব তালুকদার লজিক উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। লজিককে সমর্থন করেন উদয়পুর ইউপির চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী দাদা ভাই।

তখন থেকে মিনফুজুর রহমান মিলন বনাম শওকত হাবিব তালুকদার লজিক ও ওয়াজেদ আলী দাদা ভাইয়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধের সূত্র ধরে ওইদিন এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মোসলেমগঞ্জ বাজারে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুটি মোটরসাইকেলসহ অন্তত ১০টি দেকান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় উপজেলার পুনট মোন্না পাড়ার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে আফতাব হোসেন (৫৫) এবং মাহিষ্য পাড়ার চারু মোহন্তের ছেলে রতন মোহন্ত (৪৮) নিহত হন।

রোববার রাতে নিহত আফতাব সরকারের ছেলে গোলাম রব্বানী বাদী হয়ে কালাই থানায় হত্যা মামলা করেন। হত্যা মামলায় মাত্রাই ও উদয়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ ৪৭ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত ১৫০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে।

মামলায় ইতোমধ্যে উদয়পুর ইউনিয়নের পূর্বকৃষ্টপুর গ্রামের রমজান আলীর ছেলে ওমর আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ মামলায় এজাহারনামীয় ৪৭ জন ছাড়াও অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করায় গ্রেফতার আতঙ্কে উদয়পুর ইউপির নওয়ানা, কৃষ্টপুর গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম এখন পুরুষশূন্য।

কৃষ্টপুর গ্রামের বাসিন্দা ভুট্টোর স্ত্রী জাহানারা (৩৫) ও নূর মোহাম্মদের স্ত্রী রাহেলা বেগম (৪২) বলেন, গ্রামের দুইজন নিহতের ঘটনায় অনেককে মামলার আসামি করা হয়েছে। গ্রামের সবাই আসামি। তাই পুরুষরা বাড়ি নেই। সবাই পলাতক।

একই গ্রামের মাছুদ রানার স্ত্রী শাম্মী আকতার (২৮) ও সোহেল রানার স্ত্রী কুসুম আকতার (২৩) বলেন, গ্রামের সব পুরুষ বাড়িছাড়া। বাজার করার অভাবে সংসার চলছে না।

পাশের গ্রামের মাহবুব হোসেনের স্ত্রী সরবানু (৪০) বলেন, এলাকায় বিএনপি-জামায়াত-শিবির নাই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লড়াইয়ে গরিব মানুষ মরছে, আবার গরিব মানুষজনই মামলার আসামি হয়ে এখন এলাকাছাড়া।

একই গ্রামের লুৎফর রহমানের স্ত্রী সাহানা খাতুন (৪০), আছাহাকের স্ত্রী রোকসানা (৩৩) ও নুরুল ইসলামের স্ত্রী কুলসুম বেগমসহ (৪৫) গ্রামের নারীরা জানান, দুইজন হত্যা মামলার খবর পেয়ে গ্রেফতার আতঙ্কে গ্রামের পুরুষরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এ অবস্থায় ধান রোপণ ও কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে নওয়ানা এসইউ দাখিল মাদারাসার সুপার মুক্তার হোসেন বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় দুইজন মারা যাওয়ার কারণে মামলা হওয়ায় গ্রেফতার আতঙ্কে গ্রামের পুরুষরা এলাকাছাড়া। সবাই আতঙ্কে আছে।

জানতে চাইলে কালাই থানা পুলিশের ওসি আব্দুল লতিফ খান বলেন, গ্রামবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। পুলিশ নিরীহ কাউকে হয়রানি করবে না। প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। বর্তমানে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান ওসি।

রাজশাহী বিভাগ

আপনার মতামত লিখুন :