আজ দোল পূর্ণিমা: অন্যরকম আয়োজন বেনাপোল পাটবাড়ি আশ্রমে

এবিসি বাংলা ডেস্কএবিসি বাংলা ডেস্ক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  01:52 PM, 21 March 2019

সুনীল ঘোষ: আজ বৃহস্পতিবার (২১মার্চ) সনাতন সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোল পূর্ণিমা। শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথীতে এই দোল পূর্ণিমা উদযাপান করেন হিন্দ্র ধর্মালম্বী সম্প্রদায়।বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দোল পূর্ণিমাতে শিশু কিশোর তরুন-তরুনীসহ সব বয়সের নারী-পুরুষ আবির মেখে আনন্দ উৎসব করেন। ১৪৮৫ খ্রস্টাব্দ থেকে শ্রী চৈতান্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথিতে এই দোল পূর্ণিমা উদযাপিত হয়ে আসছে। তবে এনিয়েও রয়েছে মতভেদ।

মতান্তরে, দোলযাত্রা হিন্দু বৈষ্ণবদের উৎসব। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী এ দিন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধিকা এবং তার সখীগণের সঙ্গে আবির খেলেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। এ কারণে দোলযাত্রার দিন এই মতের বিশ্বাসীরা রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নগর কীর্তনে বের হন। এ সময় পরস্পর তারা রং খেলার আনন্দে মেতে ওঠেন।

বিশ্বের অনেক অনেক স্থানে উৎসবটি শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা নামে অধিক পরিচিত হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মাদ্রাজ, উড়িষ্যা প্রভৃতি স্থানে দোল উৎসব এবং উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারতে ‘হোলি’ নামে পরিচিত। এছাড়াও নেপালে এই উৎসব ‘হোলি’ নামে পরিচিত।

কোনো কোনো স্থানে এ উৎসবকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। দ্বাপর যুগ থেকে পুষ্পরেণু ছিটিয়ে রাধা-কৃষ্ণ দোল উৎসব করতেন। সময়ের বিবর্তনে পুষ্পরেণুর জায়গায় এসেছে ‘আবির’। সারাদেশে সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত এ উৎসব চলবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা পরস্পরকে রঙের আবির মাখিয়ে এ উৎসব উদযাপন করবেন।

এ উপলক্ষে আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন মন্দিরে পূজা, হোমযজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দোল উৎসব ও কীর্তনের আয়োজন করা হয়েছে। পূজা ও কীর্তন শুরু হয়েছে সকাল সাড়ে ৮টায়।

এদিকে সারাদেশের মতো যশোরসহ দক্ষিণা-পশ্চিমাঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী এই দোল পূর্ণিমার সকালে আবির মেখে হোলি উৎসবে মেতে উঠতে দেখা গেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের নারী-পুরুষদের।

দোল পূর্ণিমার মহোৎসবকে আরও আনন্দঘন ও উৎসবমুখর করে তুলতে যশোরের বেনাপোলের শ্রী শ্রী ব্রহ্ম হরিদাস ঠাকুরের পাটবাড়ি আশ্রমে প্রতিবছরই ৪দিনব্যাপী অনুষ্ঠান মালা সাজানো হয়। এবারও তার ব্যতয় ঘটেনি।
পাটবাড়ি আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ মাধবদাস বাবাজী জানান, উপমহাদেশের খ্যাতিমান আধ্যাত্মিক সাধক শ্রী শ্রী হরিদাস ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বেনাপোলের পাটবাড়ি আশ্রম। জানা যায়, বঙ্গবিভক্তির পর ১৯৪৭ থেকেই এই আশ্রম মন্দির চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে দোল পূর্ণিমার অনুষ্ঠান। প্রতিবছর ফাল্গুনি পূর্ণিমায় আয়োজিত হয় এই মহামিলনের উৎসব। যেখানে শুধু বেনাপোল অঞ্চলই নয়, সারা বাংলাদেশ এমনকি ভারত বর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার ভক্তবৃন্দের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠে আশ্রম প্রাঙ্গণ। শুধু সনাতন ধর্মের মানুষই নয়, সকল সম্প্রদায়ের মানুষই এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে আনন্দে মেতে উঠেন। বিশেষ করে এই অঞ্চলের মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিবাসীরাও শ্রী শ্রী হরিদাস ঠাকুরের নাম ও তার প্রতিষ্ঠিত আশ্রম, ইতিহাস, ঐতিহ্যের জন্য গর্ববোধ করেন। সে কারণে এ মহামিলন অনুষ্ঠানে মুসলিম সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ শিশুরাও সনাতন ধর্মের ভক্তবৃন্দের সঙ্গে একাকার হয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেন।

প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের সীমান্ত ঘেঁষা শহর বেনাপোল পাঠবাড়ি সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম একটি তীর্থ স্থান। ঐতিহ্যবাহী দোল পূর্ণিমা (হোলি উৎসব) মহোৎসবকে উৎসবমুখর করতে তারা কোন রকমের কমতি রাখেন না।

উল্লেখ্য, জাতিভেদ অন্ধ-কুসংস্কার অনাচারের মধ্যে যখন হিন্দু জাতি ডুবে ছিল সেই সন্ধিক্ষণে জাতিকে মুক্ত করতে জন্ম নেন কলির ভগবান গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু। সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার কেড়াগাছি গ্রামে ভক্তরূপে জন্ম নেন হরিদাস ঠাকুর। হরিদাস ঠাকুর যিনি কলির জীবগণের উদ্ধারের জন্য তার সুমধুর কণ্ঠে হরিনাম সংকীর্ত্তন করে নামাচায্য নামে এবং ব্রক্ষত্ব অর্জন করে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর বদন দেখতে দেখতে মহাপ্রভুর কোলে অস্তিম নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং মহাপ্রভু নিজ হস্তে পারিষদবর্গ সঙ্গে করে পুরীধামে তার সমাধি স্থাপন করেন। হরিদাস ঠাকুর ছিলেন প্রকৃত বৈষ্ণবের জলন্ত নিদর্শন এবং দৈন্যের অবতার।

হরিদাস ঠাকুরের সাধন কানন নামে খ্যাত বেনাপোল পাটবাড়ি। যেখানে হরিদাস ঠাকুর প্রতিদিন তিন লক্ষ নাম জপকীর্ত্তন এবং বন্ধ জীবগণের অন্তরে মুক্তির আলো প্রবেশ করিয়ে মানব কুলকে ধন্য করেন। যেখানে চিরপতিত সুন্দরী লক্ষ্মীহীরা হরিনাম মহামন্ত্রে হরিদাস ঠাকুরের কৃপা লাভে পরম বৈষ্ণবী হয়ে যান। হরির নাম মিশ্রিত প্রতিবিন্দু ধুলিকণা, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর পদধুলি, হরিদাসের কৃপা লাভে অবনত মস্তকে দণ্ডায়মান সুপ্রাচীন তমাল বৃক্ষ, মাধবী লতা আজ বৃক্ষে পরিণত। সেই সিদ্ধপীঠ তীর্থ ভূমি হরিদাস ঠাকুরের ভজনস্থল শ্রীধাম পাটবাড়ি। এদিকে বেনাপোলে উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

একই সাথে স্থানীয় ভিন্ন ধর্মালম্বী সম্প্রদায় স্বত;স্ফুর্তভাবে উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে প্রতিবছরের মতো এবারও সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবির মেখে উৎসবকে ভাগাভাগী করে নিয়েছেন।

সনাতন ধর্মাগ্রন্থ মতে, ১৪৮৫ খ্রস্টাব্দ শ্রী চৈতান্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব ঘটে। হিসেব অনুযায়ী এবার ৫৩৪তম আবির্ভাব তিথী। শ্রী জগন্নাথ মিশ্র ও শ্রীমতি সচীদেবীর ঘরে ২৩ ফাল্গুন চন্দ্র গ্রহণের তিথীতে পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হন শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু। তারই স্মরণে এই উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত হয় দোল পূর্নিমা মহোৎসব। শ্রী শ্রী হরিদাস ঠাকুর ছিলেন শ্রী শ্রী অদ্বৈত মহাপ্রভূর পরমভক্ত।

এরবাইরে যশোরের বিভিন্ন মন্দির ও পাড়া মহল্লায় আবির মেখে দোল পূর্ণিমায় উৎসব করতে দেখে গেছে।

বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো থবরে জানা গেছে,প্রায় সবজায়গাতে দোল পূর্ণিমা উদযাতি হচ্ছে।

আপনার মতামত লিখুন :